সফেদা, স্থানীয়ভাবে পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল হলেও এর আদি নিবাস উত্তর ও মধ্য আমেরিকার মেক্সিকো এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল। উষ্ণমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় সহজলভ্য এই ফলটি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) একটি উচ্চফলনশীল সফেদার জাত উদ্ভাবন করেছে যা চাষে কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। এই নতুন জাতের নাম বিনা সফেদা-১।
বিনা সফেদা-১ জাতটি প্রচলিত সফেদার তুলনায় বেশ কয়েকটি দিক থেকে উন্নত। এ জাতের সফেদার গড় ওজন ২৫০-৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে, যা প্রচলিত সফেদার সর্বোচ্চ ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই ফলের চামড়া পাতলা, শাঁস রসালো, মিষ্টি এবং বীজ ছোট। এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর উচ্চ পুষ্টিগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম সফেদায় ১৫.৫৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২৪-২৮ শতাংশ টোটাল সলিউবল সলিডস (TSS), এবং ০.৯১ শতাংশ ট্রাইটেবল অ্যাসিডিটি রয়েছে। এছাড়া, খাওয়ার উপযোগী অংশের পরিমাণ ৭৫-৯০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
বিনা সফেদা-১ জাতের সফল চাষাবাদের জন্য বেলে-দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে এই জাতটি ভালোভাবে জন্মায়, তবে জলাবদ্ধতা সহ্য করার ক্ষমতা কম। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর এবং ফল সংগ্রহের মৌসুম জানুয়ারি থেকে মার্চ ও মে থেকে সেপ্টেম্বর। সঠিক পরিচর্যায় প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৪০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
এই জাতের সফেদা উচ্চফলনশীল হওয়ায় কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। উৎপাদন বেশি হলে অভ্যন্তরীণ বাজারে ফলটির সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা দাম কমাতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত ফল বিদেশে রফতানির সম্ভাবনাও তৈরি হবে। এই জাতের সফেদা চাষে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সফল হলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সফেদা একটি পুষ্টিকর ফল। এতে প্রচুর ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, লোহা এবং আঁশ রয়েছে। পলিফেনলস যৌগ ট্যানিন থাকার কারণে এটি প্রদাহ প্রতিরোধ করে এবং জীবাণু সংক্রমণ ঠেকায়। সফেদা খেলে অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়, হাড় মজবুত হয়, ত্বক ও চোখ ভালো থাকে। এছাড়া, এটি কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
বিনা সফেদা-১ জাতের উদ্ভাবন দেশের কৃষি গবেষণায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এর উচ্চফলনশীলতা এবং পুষ্টিগুণ কৃষকদের মাঝে নতুন আগ্রহ তৈরি করবে। সঠিকভাবে প্রচার ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই জাতটি বাণিজ্যিক চাষে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনতে পারে। এতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি দেশের ফল রফতানির ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।