সীমান্ত নিরাপত্তা ও চোরাচালান প্রতিরোধে কোনো প্রকার শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না বলে সতর্ক করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। সভায় বিজিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সীমান্তে বিজিবির নজরদারি ও কার্যক্রমের মান আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে, যা সাধারণ জনগণ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
মতবিনিময় সভায় বিজিবির শৃঙ্খলা ও কার্যক্রমের প্রশংসা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বিজিবির সদস্যদের চেইন অব কমান্ড মেনে কাজ করতে হবে। তবে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বেআইনি আদেশ মেনে নেওয়া যাবে না। আদেশ বৈধ ও আইনসঙ্গত কিনা তা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।” তিনি বিজিবি সদস্যদের প্রতি জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান।
বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা একটি সুশৃঙ্খল ও প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্য। দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকুন। নিজেদের দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিষ্ঠা বজায় রাখুন।” তিনি বিজিবির সদস্যদের নবোদ্যমে কাজ করার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বলেন, “এই ঘটনায় কমিশন গঠন করা হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে পুনঃতদন্ত অবশ্যই হবে এবং তা দ্রুত সম্পন্ন হবে।” তিনি আরও বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, তবে পুরোপুরি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।”
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও আমরা আরও উন্নতির জন্য কাজ করছি। সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বিজিবির প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ানোর জন্য তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীও সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিজিবির কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেন। মহাপরিচালক বলেন, “আমরা সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। দেশের নিরাপত্তা ও চোরাচালান প্রতিরোধে আমাদের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”
সভায় সীমান্ত সুরক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হয়। উপদেষ্টা বলেন, “সীমান্তে নজরদারি ও নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে ড্রোন ও অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা চোরাচালান প্রতিরোধে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারব।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং বিজিবির কর্মকর্তারা একমত হয়েছেন যে, সীমান্ত সুরক্ষায় জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করলে বিজিবি আরও শক্তিশালী ও কার্যকর হয়ে উঠবে। মতবিনিময় সভায় এ বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সীমান্তে শিথিলতা প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই—এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবিকে আরও দক্ষ ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজিবি সীমান্ত সুরক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।