রাজধানীর উত্তরায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আমজাদ হোসেনের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, এবং মূল্যবান সামগ্রীসহ আটক হয়েছেন তিনি ও তার ছেলে। রোববার (৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে এসব দ্রব্যাদি জব্দ করা হয়। অভিযানে মোট এক কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ১১টি আইফোন এবং বেশ কিছু ব্র্যান্ডেড ঘড়ি উদ্ধার করা হয়।
ঢাকার উত্তরা এলাকাটি রাজধানীর আধুনিক ও অভিজাত এলাকায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা-১১ সেক্টরের মতো অঞ্চলগুলো বসবাসের জন্য নির্ধারিত হলেও এখানে অপরাধমূলক কার্যকলাপের সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আমজাদ হোসেনের বাড়িতে বড় অঙ্কের অর্থ এবং বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
অভিযানটি শুরু হয় রোববার রাত ১০টার দিকে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের ৩৩ নম্বর বাড়িতে যৌথ বাহিনী হানা দেয়। অভিযানে মোট চার ঘণ্টার পরিসরে পুরো বাড়ি তল্লাশি করা হয়। অভিযান শেষে নগদ এক কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা, ইউরো, ডলার, পাউন্ডসহ বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রা, ১১টি মূল্যবান আইফোন এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের ঘড়ি উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, “আমাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল যে এখানে অবৈধভাবে সম্পদ সংরক্ষিত রয়েছে। নির্দিষ্ট তথ্য অনুযায়ী আমরা অভিযান চালাই এবং সফলভাবে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী জব্দ করতে সক্ষম হই।”
জব্দকৃত দ্রব্যাদির তালিকা:
১. নগদ টাকা: এক কোটি সাড়ে ৯ লাখ
২. বিদেশি মুদ্রা: ইউরো, ডলার, পাউন্ড
৩. মোবাইল: ১১টি আইফোন
৪. ঘড়ি: ব্র্যান্ডেড ঘড়ি, যার বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা
মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবনে তার বিভিন্ন কর্মের জন্য প্রশংসিত হলেও অবসরের পর থেকে তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর সদরে, যা একটি মফস্বল এলাকা হিসেবে পরিচিত।
অভিযান শেষে মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন এবং তার ছেলেকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, প্রাথমিক তদন্তে এটি অবৈধ সম্পদ হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। এজন্য তাদের সম্পত্তির উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।
উত্তরায় এ ধরনের একটি অভিযান স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন কিভাবে একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এত বিপুল সম্পদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেন। অনেকে এটিকে বর্তমান সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের সফল উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা জানতাম না আমাদের আশপাশে এ ধরনের কার্যকলাপ হচ্ছে। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।”
দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনা নতুন কিছু নয়, তবে এই অভিযানটি প্রমাণ করে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে তৎপর। এই ধরনের অভিযান চলমান থাকলে অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে সতর্কতা বৃদ্ধি পাবে।” বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের অভিযান জনগণের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং অবৈধ সম্পদ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও জানিয়েছে যে, এই অভিযানটি শুধু একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। তদন্ত শেষে আরও তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত করবে যে কীভাবে এবং কোন উদ্দেশ্যে এসব অর্থ ও দ্রব্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাদের মতে, সম্পত্তির প্রকৃত উৎস খুঁজে বের করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
উত্তরায় সাবেক অতিরিক্ত সচিবের বাসায় অভিযান বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের একটি নজির স্থাপন করেছে। অভিযানে বিপুল অর্থ এবং মূল্যবান সামগ্রী জব্দ হওয়া শুধু জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে না, বরং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভীতিও সৃষ্টি করবে।