ঝাড়খণ্ড, ৪ নভেম্বর ২০২৪
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি নিয়ে কঠোর প্রশ্ন তুলেছেন। ঝাড়খণ্ডের গাড়োয়া বিধানসভায় দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে গিয়ে তিনি সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেন। হেমন্ত সোরেনের বক্তব্য, শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার ‘দ্বৈত ভূমিকা’ পালন করছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের প্রশ্ন তুলে দেয়।
হেমন্ত সোরেনের মতে, কেন্দ্র এবং বিজেপি নেতারা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে দ্বিমুখী ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া অবস্থান থাকলেও, শেখ হাসিনার হেলিকপ্টার ভারতে নেমে আশ্রয় পাওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। এই বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলাদেশ নীতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলে মন্তব্য করেন।
হেমন্ত সোরেন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শপথ নেয়ার সময় সংবিধানের সামনে মাথা নত করেছিলেন এবং বলেছিলেন সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে, সমাজের সব অংশ সমান অধিকার পাবে। কিন্তু আপনি কি বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা করেছেন? আপনি কেন হাসিনার হেলিকপ্টার ভারতে নামতে দিলেন?” তাঁর এই মন্তব্য স্পষ্টতই প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সম্পর্কিত নীতির স্বচ্ছতার অভাবের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সোরেন বলেন, “ঝাড়খণ্ডে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বে রয়েছে। তাহলে সীমান্ত পাহারা দেয়া এবং অনুপ্রবেশ রোধ করাও কেন্দ্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কোনো হাত নেই।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঝাড়খণ্ডে এক নির্বাচনী প্রচারে এসে বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে প্রবেশ রোধ করার ক্ষমতা পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকার রাখে। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়ে অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দেন যে, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং তাদের জমি কেড়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
অমিত শাহের মন্তব্যের জবাবে হেমন্ত সোরেন জানান, ঝাড়খণ্ডে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং এটি কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। অর্থাৎ ঝাড়খণ্ড থেকে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে তা আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির অংশ, যা আঞ্চলিক সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য বলে দাবি করা হয়। তাই সীমান্তে অনুপ্রবেশের রোধের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পদক্ষেপই মুখ্য হওয়া উচিত বলে সোরেন মন্তব্য করেন।
এই বিতর্কের মধ্যে দিয়ে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রতি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন। এই বিষয়ে তার বক্তব্য, রাজ্যের ওপর অনুপ্রবেশ নিয়ে দোষারোপ করা ঠিক নয় বরং এটি কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব।
শেখ হাসিনার ভারতীয় মাটিতে আশ্রয় নেয়ার প্রশ্নটি সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনী প্রচারে উত্তপ্ত ইস্যু হয়ে উঠেছে।