ঢাকা, ৩ নভেম্বর: সম্প্রতি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট গভীরতর হয়েছে আদানি পাওয়ারের পাওনা পরিশোধ না করতে পারার কারণে। ভারতীয় আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক সরকারের কাছে জিম্মি হবে না।”
রোববার (৩ নভেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম দেশের বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে সরকারের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি জানান, আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের খবরে সরকার হতবাক। তবে পাওনা পরিশোধের জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
ভারতের আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) থেকে প্রায় ১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের সমান। সময়মতো এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে না পারায় এবং পাওনা পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সরবরাহে চুক্তির শর্তভঙ্গ হয়েছে বলে জানিয়েছে আদানি গ্রুপ।
আদানি গ্রুপ গত ৩১ অক্টোবর পাওনা পরিশোধের জন্য শেষ সময় নির্ধারণ করেছিল। তবে বিপিডিবি কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭০ মিলিয়ন ডলার এলসি খোলার চেষ্টা করলেও তা পূরণ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে পুরো বকেয়া পরিশোধ না করা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে আদানি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে সময়মতো আদানি গ্রুপের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে দেশের অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এস আলম এবং রামপালেও উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়লেও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং আমদানি ব্যয় মেটাতে সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদানি পাওয়ারের যৌথ সমন্বয় কমিটির সভাপতি এম আর কৃষ্ণ বিপিডিবিকে চিঠি দিয়ে জানায় যে, লেটার অব ক্রেডিট প্রদান ও পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়েছে। এতে কয়লা সরবরাহ ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় মেটানো যাচ্ছে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এলসি প্রদান এবং বকেয়া পরিশোধের জন্য ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি থাকলেও দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা কম থাকলেও ডলার সংকটের কারণে আমদানি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারণে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে।
শফিকুল আলম বলেন, “সরকার জনগণের স্বার্থে দ্রুততম সময়ে সমাধান নিশ্চিত করতে কাজ করছে।” তবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে বৈদেশিক ঋণ ও ডলারের মজুদ সংক