বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করছে ভারত। প্রথমবারের মতো ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে, যা এই দেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তার পরিচায়ক। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) তথ্য অনুযায়ী, মাত্র এক সপ্তাহে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে জমা হয়েছে ১২.৫৮৮ বিলিয়ন ডলার, যার ফলে ৭০০ বিলিয়ন ডলারের সীমা ছুঁতে পেরেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই মজুত বেড়ে ৭০৪.৮৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ে ভারত বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ভারতের আগে শুধুমাত্র চীন, জাপান এবং সুইজারল্যান্ড রয়েছে। এই অবস্থানটি ভারতের জন্য গর্বের বিষয়, যা ভারতকে বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে তুলে ধরছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি বড় সাফল্য এবং এর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে ভারত অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েক বছরে ভারতের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। শক্তিশালী রপ্তানি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের বৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্য এবং বিশ্বব্যাপী চাহিদার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআই ভারতীয় মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলো বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে।
বর্তমানে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। তবে ভারতের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে উন্নীত হওয়া। অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের এই আর্থিক বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধির প্রবণতা বজায় থাকলে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। শক্তিশালী বাণিজ্য নীতি, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ এবং সরকার ও আরবিআই-এর সঠিক নীতি ও প্রণোদনা ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সঠিক পথে পরিচালিত করছে।
অতীতে ভারত বিশ্বের “ভঙ্গুর পাঁচ” অর্থনীতির একটি হিসেবে বিবেচিত হতো। বৈশ্বিক মন্দা এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে ভারত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। তবে বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন ভারত শুধু নিজেই স্থিতিশীল নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও ভারত তার নিজস্ব অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এটি ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর শক্তিমত্তা এবং সঠিক নীতির ফলশ্রুতি। আরবিআই এবং সরকারের যৌথ উদ্যোগে ভারতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছে।
ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যকে আরো স্থিতিশীল করেছে। এটি দেশের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক আস্থা বৃদ্ধি করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ভারতকে আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছে। এই মজুত উন্নয়ন প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক দায় মেটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন যে, ভবিষ্যতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে এবং ভারত বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
ভারতের অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রা এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বৃদ্ধি দেশটির জন্য একটি গৌরবজনক অর্জন, যা শুধু অর্থনীতির উন্নতিই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক আর্থিক সুরক্ষাকেও বৃদ্ধি করছে।