গাজীপুর: গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গাজীপুর মহানগরের লক্ষীপুরা এলাকায় গাঁজা, ইয়াবা ও নগদ টাকাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার (২ নভেম্বর) মধ্যরাতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ দুই নারী ও তিনজন পুরুষকে আটক করা হয়েছে। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
যৌথ বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য কমাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও মাদকবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী এই ধরনের অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে। যৌথ বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, গাজীপুরের লক্ষীপুরা এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে মাদকদ্রব্য মজুদ রয়েছে। সেই অনুযায়ী দ্রুত অভিযান পরিচালনা করি এবং সফলভাবে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।”
অভিযানটি শনিবার রাত ১২টার দিকে শুরু হয় এবং কয়েক ঘণ্টা ব্যাপী চলে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা লক্ষীপুরা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি চালান। একাধিক বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের সাথে নগদ টাকাও পাওয়া যায়, যা মাদক বিক্রির আয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযানের সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে ছিলেন এবং তাদের সহায়তা করেন। স্থানীয়রা এই ধরনের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যৌথ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ধরনের অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, “মাদক ও সন্ত্রাসের কারণে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যৌথ বাহিনী যে সাহসিকতা ও দক্ষতার সাথে এই অভিযান পরিচালনা করেছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। আশা করি, এর মাধ্যমে এলাকায় মাদক ও সন্ত্রাস কমবে।”
গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে যৌথ বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। নারীদের উপস্থিতি মাদক ব্যবসার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যদের খুঁজে বের করার জন্য ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
যৌথ বাহিনী জানিয়েছে, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা মাদক ব্যবসা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই ধরনের অভিযান আগামীতেও পরিচালনা করা হবে। জনগণের সহযোগিতায় আমরা একটি মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।”
সরকারও মাদকবিরোধী কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিককালে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের ফলে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে মাদকের প্রসার কিছুটা হলেও কমেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, জনগণ ও প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় মাদকবিরোধী অভিযান আরও সফল হবে।
মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ধরনের সফল অভিযান এলাকাবাসীর জন্য একটি নতুন আশা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাধারণ জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই একটি নিরাপদ ও সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
মাদকবিরোধী এই ধরনের অভিযান শুধু গ্রেপ্তার ও মাদক উদ্ধারেই সীমাবদ্ধ নয়। এর মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে একটি সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেয়। এলাকাবাসীর নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।