কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং প্রতারণার একাধিক অভিযোগ। যুবলীগের প্রাক্তন এই নেতা নিমসার কাঁচাবাজারে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দখলদারি করে অবৈধভাবে প্রায় শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির জমি দখল করে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি ও পর্যটন কেন্দ্র। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করেও তাকে থামানো যায়নি।
২০১২ সালে কুমিল্লার নিমসার কাঁচাবাজারের ইজারা নেওয়ার মাধ্যমে মামুনের এই দখলদারির সূত্রপাত। বাজারটির ইজারার দাম ১ কোটি টাকা হলেও তিনি ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা দর হাঁকিয়ে ইজারা পান। পরে সামান্য কিছু টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা ঝুলিয়ে রাখেন, আর ইজারার বাকি টাকার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে সময় নেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাজারটি দখলে নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকা করে খাজনা আদায় করেন মামুন, যা মাসে দাঁড়ায় ৬০ লাখ এবং বছরে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত ১২ বছরে এই খাজনা থেকে মামুনের অবৈধ উপার্জন প্রায় শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
নিমসার বাজার ইজারা নিয়ে শেয়ার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মামুন স্থানীয় ৭-৮ জন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় কয়েক কোটি টাকা ধার নিয়েছেন। তাদের আসল টাকা ফেরত না দিয়ে লভ্যাংশও দেননি। অ্যাডভোকেট মাহাবুবের অভিযোগ, মামুন তার কাছ থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন শেয়ারের নামে। মামুনের বিরুদ্ধে এমন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে যেখানে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মামুন স্থানীয় জাকির হোসেন মাস্টারের ৪ একর জমি দখল করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। এছাড়া বারাইর গ্রামের নাবালক ও সাবালক মিয়ার ৩ একর জমি দখল করে মাছের খামার করেছেন। জমি দখল করতে গিয়ে তিনি নিজের ভাইসহ সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যবহার করেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা মামুনের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করেছেন।
নিজ গ্রামের আকাবপুরে মামুন তার দুই স্ত্রীর নামে দুটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া ছেলে-মেয়ের নামে আরও দুটি বাড়ি করেছেন। স্থানীয়রা জানান, মামুনের বিরুদ্ধে জমি দখল ও মাদকের মামলাও রয়েছে। এই মাদক মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার আসফিকুজ্জামান আক্তার জানান, মামুনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, কিছুদিন আগে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে, তবে তাকে পাওয়া যায়নি।
মামুনের এমন অপকর্ম ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা মামুনের দখল করা জমি ও অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি তার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।