প্রতিবেদন:
রাজধানীর মিরপুর-১ মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট এলাকায় চাঁদাবাজি এবং ব্যবসায়ীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে কামাল নামে একজনকে আটক করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেন এক সেনা কর্মকর্তা। আটক কামালকে পরবর্তীতে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সেনাবাহিনীর সূত্র মতে, চাঁদাবাজ চক্রটি কবির নামে একজনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছিল, যার সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন কামাল। এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অনুসারে, কবির একচেটিয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপর চাঁদা আদায় এবং শারীরিক হেনস্থার মতো নির্যাতন চালাতো।
গত আগস্ট মাসে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করা হলে, সংশ্লিষ্ট বাহিনী গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় রাখে অভিযুক্ত কামালকে। বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত ভিডিও ও তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার রাতে কামালকে আটক করে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, চাঁদা না দিলে কবির-কামালের লোকজন ব্যবসায়ীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো। কেউ চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। ফলে এক প্রকার আতঙ্কের মধ্যে থাকতেন মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
সেনাবাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, কবির দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের নেতা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সাথে কাজ করে আসছিলেন। কবিরের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে স্থানীয় প্রশাসনও তাকে নির্দিষ্টভাবে প্রতিহত করতে পারছিল না বলে জানা যায়। ব্যবসায়ীরা জানায়, এতদিন কবিরের প্রভাবে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়নি।
সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, “চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতা কবিরের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আশা করছি খুব শীঘ্রই তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এই চক্রটি মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করছিল। কামালের আটকের মাধ্যমে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।”
কামাল আটকের খবরে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, “কবির-কামালের চাঁদাবাজির কারণে আমরা ব্যবসা করতে পারছিলাম না। তাদের আটক করায় আমরা কিছুটা হলেও নির্ভয় বোধ করছি।”
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাঁদাবাজ কবিরের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবসায়ীদের সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।