ঢাকা, ১ নভেম্বর ২০২৪ – রাজধানীর ভাষানটেক ও কাফরুল এলাকায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তিনজন যুবককে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আটককৃতরা হলেন রিফাত, হৃদয় এবং ইয়াসিন। বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীর অন্তঃবিভাগ জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা কচুক্ষেত এবং মিরপুর ১৪ এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ভাষানটেক থানার আওতাধীন এই এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছিলো। কিছু দুষ্কৃতকারী সেখানে পৌঁছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং পরে অগ্নিসংযোগ করে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, দুষ্কৃতকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমণ ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর এই গাড়িগুলি সরকারী সম্পত্তি হওয়ায় ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে।
ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভিযানে নামে। সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শুক্রবার (১ নভেম্বর) ভাষানটেক এলাকা থেকে রিফাত, হৃদয় এবং ইয়াসিন নামের তিন যুবককে আটক করা হয়। আইএসপিআর-এর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। যেকোনো ধরনের অরাজকতা এবং সহিংস কার্যক্রম দমন করতে সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”
আইএসপিআর-এর তথ্য অনুসারে, আটককৃতদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভাষানটেক থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই তিনজনের সঙ্গে স্থানীয় কোনো উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে, যারা রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিপন্ন করতে চায়। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করেছে।
এ ধরনের সহিংস ঘটনা রাজধানীর বুকে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, “এমন কঠোর পদক্ষেপ না নিলে অপরাধীরা আরও ভয়ঙ্কর হতে পারত।” অন্যদিকে, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানের ফলে এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে।
সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিভাগ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কারো সঙ্গে আপোষ নয়। এ ধরনের সহিংস হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রতিটি এলাকা ও মহল্লায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।” ভাষানটেক থানার এক কর্মকর্তা বলেন, “গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করে আমরা এই ঘটনার মূলে পৌঁছাতে চেষ্টা করছি। আইন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সাম্প্রতিক এই ঘটনা ঢাকা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অনেকেই মনে করছেন যে, রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি এবং অভিযান আরও জোরদার করা প্রয়োজন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, “বিশ্ব পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে রাজধানীতে অপরাধের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে।”
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানো হবে। বিশেষ করে কচুক্ষেত ও মিরপুর ১৪-এর মতো এলাকা, যেখানে জনবহুলতা বেশি, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় করা হবে। একইসঙ্গে, দুষ্কৃতকারীদের ধরতে এবং তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বিভাগের এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ জনগণের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক। সরকারী সূত্র জানাচ্ছে, “আইনের শাসন বজায় রাখতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অপরাধের শেকড় খুঁজে তাদের নির্মূল করা হবে।”