বাংলাদেশের ছয়টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে সেগুলোর পরিচিতি সংশ্লিষ্ট জেলার নামে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে পরিচিত এই মেডিক্যাল কলেজগুলো এখন থেকে শুধু জেলার নামে পরিচিত হবে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়, যার ওপর স্বাক্ষর করেছেন সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী।
এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মেডিক্যাল কলেজগুলো হলো
শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, জামালপুর – নতুন নাম: জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ
শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, টাঙ্গাইল – নতুন নাম: টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর – নতুন নাম: ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ
কর্ণেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ, মানিকগঞ্জ – নতুন নাম: মানিকগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ
আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ, নোয়াখালী – নতুন নাম: নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ
এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ, দিনাজপুর – নতুন নাম: দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পক্ষ থেকে এ প্রজ্ঞাপনে নাম পরিবর্তনের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা না করা হলেও জানা গেছে, জেলা ভিত্তিক পরিচিতি প্রদান করায় মেডিক্যাল কলেজগুলো স্থানীয়ভাবে আরও সহজে চিহ্নিত করা যাবে। অনেকে মনে করছেন, এটি মূলত স্বাস্থ্যসেবাকে আরও জনবান্ধব ও সহজলভ্য করার উদ্যোগের অংশ। জেলার নামে এই পরিচিতির ফলে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ নিজ জেলার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারবে, যা স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা আনতে সহায়ক হবে।
অন্যান্য দেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা প্রচলিত যেখানে সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান স্থানীয় এলাকার নামে পরিচিত হয়ে থাকে। এতে করে স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রশাসনের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকে।
নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে জনমত মিশ্রিত হয়েছে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, কারণ তারা মনে করছেন জেলার নামে পরিচিতি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি স্থানীয় মানুষের আবেগ ও আকর্ষণ বাড়বে। একইসঙ্গে তাদের আশা, এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেদের জেলার জন্য কাজ করার আগ্রহ তৈরি করবে এবং স্থানীয় জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য হবে।
তবে সমালোচনার কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকৃত মেডিক্যাল কলেজগুলোর নাম পরিবর্তন করায় অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এ ধরনের নাম দেশের মহান নেতাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিদর্শন ছিল, যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে তাদের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি মাধ্যমও ছিল।
নাম পরিবর্তনের ফলে মেডিক্যাল কলেজগুলোর দৈনন্দিন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হবে না। শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, সিলেবাস বা শিক্ষাদানের পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে এই নাম পরিবর্তন প্রশাসনিক দিক থেকে কিছু প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয়ভাবে মেডিক্যাল কলেজগুলোর নাম পরিবর্তনের কারণে কিছুটা সুনির্দিষ্টতার অভাবও দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে তাদের যারা এর আগে পুরোনো নামে মেডিক্যাল কলেজগুলোকে চিনতেন। এ বিষয়ে যথাযথ প্রচারণা ও বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে যাতে এই পরিবর্তন সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যায়।
বিশ্বজুড়ে অনেক দেশেই নামকরণে জনপ্রিয় বা বিশেষ ব্যক্তিত্বের নাম ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন উন্নত দেশে এই ব্যবস্থা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যেখানে বিশেষ ব্যক্তির নামে সরকারি প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনাগুলোর নাম রাখা হয়। এতে করে সেই ব্যক্তি এবং তার অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও একই কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য ব্যক্তিত্বদের নামে মেডিক্যাল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
তবে বর্তমানে জেলাভিত্তিক পরিচিতি দেওয়ার প্রবণতা যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তেমনি অন্য দেশেও স্থানীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। এই পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে আরো সংযোগ স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
মেডিক্যাল কলেজগুলোর নাম পরিবর্তন করার মাধ্যমে স্থানীয়করণ প্রক্রিয়া আরও দৃঢ় হলো। এর ফলে স্থানীয় মানুষজন তাদের জেলা বা অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আরও বেশি সংযুক্তিবোধ করতে পারবেন। যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তারপরও এটি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
এখন দেখার বিষয় হলো, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এই নাম পরিবর্তন ভবিষ্যতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে এবং কীভাবে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা আরও সুসংগঠিত ও স্বচ্ছ হবে।