বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দীর্ঘমেয়াদি আশ্রয় ও তাদের মানবিক সহায়তার প্রেক্ষিতে এবার অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক নিরাপদে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠককালে এ বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশ প্রায় দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা এবং মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগের প্রয়োজন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, অস্ট্রেলিয়া এই সংকটে বাংলাদেশকে আরও নৈতিক এবং বস্তুগত সহায়তা দিয়ে সহায় হবে।
টনি বার্ক পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনেই এ সমস্যার মূল সমাধান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি সতর্ক করেন যে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি শুধু বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নয়, বরং পুরো অঞ্চল ও বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী আরও বলেন, নিরাপদ এবং নিয়মিত অভিবাসনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করা সম্ভব। তবে তিনি অনিয়মিত অভিবাসনের নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন এবং নিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির সুযোগ উন্নত করতে কাজ করতে আগ্রহী। এছাড়া দুই পক্ষই অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি আইটি বিশেষজ্ঞদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছেন।
বৈঠকে টনি বার্ক উল্লেখ করেন, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি সম্প্রদায় এবং তার নির্বাচনি এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের প্রতি তিনি সমর্থন প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সরকারি সংস্কার উদ্যোগকে উৎসাহিত করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি সহায়তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের উপস্থিতি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় এটি শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয়, বরং পুরো অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী টনি বার্ক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।