ঢাকার সড়কে চলাচল করা ফিটনেসবিহীন ও পুরনো বাস-মিনিবাসগুলো দূষণ ও যানজট কমাতে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বর্তমানে রাজধানীর ১১০টি রুটে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১৫০টি বাস-মিনিবাসের ফিটনেস নেই, যা পুরো গণপরিবহনের ২০ শতাংশেরও বেশি।
বিআরটিএ জানিয়েছে, রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধ এবং যানজট কমাতে আগামী এপ্রিলের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ বছরের পুরনো এইসব যানবাহন সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। পরিবেশবিদদের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের ১৫ থেকে ১৭ শতাংশের জন্য এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি দায়ী।
পরিবেশবিদ ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, “যেকোনো জায়গায় বায়ুদূষণ হলে এর প্রভাব অন্যান্য এলাকাতেও পড়ে। তাই এবার ফেজ-আউট কার্যক্রম চালানোর সময় আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে এটি শুধু নামেমাত্র ঢাকাতে না হয়, বরং পুরোপুরি ফেজ-আউট করতে হবে।”
নগরবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং পরিবহন সিন্ডিকেটের কারণে ঢাকার পরিবহন পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। সরকারের উচিত এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আপস না করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।”
এদিকে পরিবহন মালিকদের মতে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন সরিয়ে নিলে গণপরিবহনে সংকট দেখা দিতে পারে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাজী জোবায়ের মাসুদ বলেন, “জনগণকে পরিবহন করার জন্য প্রয়োজনীয় গণপরিবহন কমে যেতে পারে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হতে পারে।”
বিআরটিএ’র পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, “পরিবেশ রক্ষার জন্য এসব যানবাহন সরানো জরুরি। তবে জনগণের দুর্ভোগ যাতে কম হয়, সে জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।” এদিকে পরিবহন মালিকদের পরিবেশবান্ধব যানবাহন আমদানিতে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার আশ্বাসও দিয়েছে সরকার।
নগরবিদ ও পরিবেশবিদরা একমত যে, বায়ুদূষণ রোধ ও পরিবেশবান্ধব ঢাকা গড়তে পুরনো-ফিটনেসবিহীন যানবাহন সরিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আগামী এপ্রিলের মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে রাজধানীর বায়ুদূষণ ও যানজট অনেকটাই কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পুরনো-ফিটনেসবিহীন যানবাহন তুলে নিতে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যদিও এখনো সংকট মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা করা হয়নি, তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যকর নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।