রংপুরের এক কিশোর সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছে, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুর খবরটি গুজব বলে প্রমাণিত হয়েছে। আহত কিশোর লিখন মিয়া বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল চার বন্ধু মারুফ, রনি, মোরসালিন ও আবু সিদ্দিকের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হন লিখন। তারা সিংগিমারী ব্রিজ এলাকায় গিয়েছিলেন, যেখানে রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় ট্রেনের খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা লিখন মিয়া হঠাৎ ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। স্থানীয়দের মতে, ৪৬২ ডাউন বুড়িমারী লোকাল ট্রেনটি যখন সিংগিমারী ব্রিজ পার হচ্ছিল, তখন এই ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখন মারা গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়ে লিখনের বড় ভাই মিথুন বলেন, “ফেসবুকে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর দেখে অবাক হয়েছি। এমন ভুয়া তথ্য ছড়ানো ঠিক নয়।” তিনি আরও বলেন, “আমার ভাই এখন ভালো আছে। সকল মা-বাবার প্রতি অনুরোধ, আপনার সন্তানদের প্রতি নজর রাখুন।”
লিখন মিয়ার বাবা মেহেরুল ইসলাম বলেন, “আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমার ছেলেকে নতুন করে জীবন দিয়েছে। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।” লিখনের মা লিলি বেগম জানান, তারা ঘটনাস্থলে যাননি এবং দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না। প্রথমে লিখনকে প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, লিখনের মাথায় ১৩-১৪টি সেলাই পড়েছে, তবে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
লিখনের বন্ধু মোরসালিন দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা ট্রেন থেকে একটু দূরেই ছিলাম। লিখন যখন সেলফি তুলতে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন সে বুঝতে পারেনি ট্রেন তার কাছে চলে এসেছে।” তিনি আরও জানান, তারা মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে গিয়ে ভিডিও রেকর্ড হয় এবং আকস্মিকভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাব্বির জানান, লিখন বেঁচে আছে এবং তার অবস্থা উন্নতির দিকে। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার সময়ের ভিডিওটি অনেকের মনে দাগ কেটেছে। তবে আমরা আশাবাদী লিখন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।”
এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রেললাইনের কাছে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা বা ভিডিও করা বিপজ্জনক। এই ধরনের অসতর্কতার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। লিখনের পরিবারের সদস্যরা এবং বন্ধুরা সকলের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন, নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে এবং সন্তানদের কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন থাকতে।
লিখন মিয়ার দুর্ঘটনা একদিকে যেমন গভীর দুঃখের বিষয়, তেমনি এর মাধ্যমে আমরা সকলেই একটি শিক্ষা নিতে পারি। নিরাপত্তা ও সচেতনতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোও উচিত নয়, বরং সত্য তথ্য প্রচার করা উচিত। আমরা সবাই আশা করি, লিখন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এবং এই ঘটনা অন্যান্য কিশোরদের জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে কাজ করবে।