চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ – ঢাকা টেস্টে হারের পর বাংলাদেশ দল এখন সিরিজে সমতা আনার লক্ষ্যে চট্টগ্রামে মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকার। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। তবে শুরুতেই টস হারলেও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার নেতৃত্বে টাইগার শিবিরে রয়েছে উজ্জীবিত প্রত্যাশা।
সিরিজে প্রথম ম্যাচে পরাজিত হওয়ায় চট্টগ্রাম টেস্টের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গেছে টাইগারদের জন্য। সেখান থেকেই ম্যাচের শুরুতে টস হারটা একটু হতাশার হলেও আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে না শান্তর দল। তিনি বলেন, “আমরা জানি আমাদের সামর্থ্য কী, আমাদের খেলার মানটা ধরে রাখতে হবে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনের চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে আমাদের বোলাররা প্রস্তুত।”
বাংলাদেশ দলে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে এই ম্যাচে। ঢাকা টেস্টের পর খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো দলে সুযোগ পেয়েছেন তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখিয়ে অঙ্কন সবার নজরে এসেছেন। তার অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ দলে নতুন উদ্দীপনা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, স্পিন ও পেস বিভাগেও কিছু সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে, যা বাংলাদেশের কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
চট্টগ্রাম টেস্টের ভেন্যু: পিচ রিপোর্ট এবং পরিবেশের বিশ্লেষণ
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বরাবরই স্পিনারদের জন্য অনুকূল বলে পরিচিত। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে, যারা স্পিন ভালো খেলতে পারে, এই পিচে কৌশলগতভাবে বোলারদের বড় ভূমিকা রাখতে হবে। চট্টগ্রামের পিচ কিছুটা শুষ্ক এবং বাউন্সি হওয়ায়, ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য ধরে খেলতে হবে। বাংলাদেশ দল তাই স্পিনারদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পেস বোলারদের ব্যবহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা টেস্টে ব্যাটসম্যানদের টেকনিক্যাল সমস্যাগুলি বেশ নজরে এসেছে, যা এই ম্যাচে ঠিক করা জরুরি। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের উপর এই টেস্টে বড় ইনিংস খেলার প্রত্যাশা রয়েছে। শান্ত বলেন, “ব্যাটিং লাইনআপে আমাদের আরও স্থিতিশীলতা আনতে হবে এবং প্রতিপক্ষের পেস ও স্পিন আক্রমণ সামাল দিতে হবে।”
বাংলাদেশের পেস আক্রমণেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে যাতে স্পিনারদের সাথে সমন্বয় করে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখা যায়। তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের মতো পেসাররা দলের মূল অস্ত্র হিসেবে প্রস্তুত রয়েছেন, যাদের গতি ও আক্রমণাত্মক মেজাজ ম্যাচের গতি নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। অপরদিকে, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম থাকবেন স্পিন আক্রমণের মূল স্তম্ভ।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক তাদের শক্তিশালী ব্যাটিং এবং অভিজ্ঞ পেস আক্রমণের ওপর নির্ভর করছেন। চট্টগ্রামের পিচের সুবিধা নিয়ে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামার সিদ্ধান্তও সেখান থেকে এসেছে। তাদের দলে কয়েকজন অভিজ্ঞ স্পিনারও রয়েছেন, যারা কন্ডিশন অনুযায়ী বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
এই টেস্টে ফলাফল নির্ধারণে প্রথম দুই দিনের খেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষকে দ্রুত আউট করে ব্যাটিংয়ের জন্য একটা ভালো মঞ্চ তৈরি করা অন্যতম লক্ষ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ইনিংসে ভালো সংগ্রহ গড়ে তোলা গেলে বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারবে।
চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ দল যেমন চাপের মুখে রয়েছে, তেমনি তাদের সামনে সিরিজে সমতা আনার বড় সুযোগও রয়েছে। ঢাকার ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে শক্তিশালী পরিকল্পনা অনুযায়ী খেললে টাইগাররা এই ম্যাচে জয় ছিনিয়ে আনতে পারে।