প্যারিস, ২৮ অক্টোবর (বাংলাদেশ সময়) – ফুটবল বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে এবার ইতিহাস গড়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি। রদ্রিগো হার্নান্দেজ, যিনি রদ্রি নামে পরিচিত, হয়েছেন প্রথম ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবলার যিনি এ পুরস্কার জিতলেন। ২৮ বছর বয়সী এই তারকা অর্জন করলেন এক বিরল সম্মাননা; দীর্ঘ ৬৪ বছর পর কোনো স্প্যানিশ ফুটবলারের হাতে উঠলো এই ব্যালন ডি’অর।
দিবাগত রাতে প্যারিসের থিয়েটার দু শাতেলেতে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক এই ট্রফিটি তুলে দেন কিংবদন্তি ফুটবলার জর্জ উইয়াহ, যিনি একমাত্র আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জয়ী। রদ্রির জন্য ছিল এক আবেগময় মুহূর্ত; এসিএল চোটে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে মাঠের বাইরে থাকা এই ফুটবলার ক্রাচে ভর দিয়ে মঞ্চে উঠে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে এই পুরস্কার বিরল ও বিশেষ এক সম্মান বয়ে এনেছে। সর্বশেষ স্প্যানিশ ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন লুইস সুয়ারেজ, সেই ১৯৬০ সালে। এরপর দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি সময়ের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রদ্রি আবার স্পেনকে এই গৌরব এনে দিলেন। ফুটবলবিশ্বে স্পেনের আধিপত্য থাকলেও ব্যক্তিগত পুরস্কার হিসেবে ব্যালন ডি’অরের ক্ষেত্রে স্পেন বরাবরই একধাপ পিছিয়ে ছিল। তবে রদ্রির এই বিজয় তা বদলে দিয়েছে।
২০২৩ সালের ক্লাব মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। তিনটি বড় ট্রফি – প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে তার অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তার করা গোল ম্যানচেস্টার সিটিকে ইউরোপের শিরোপা এনে দেয়। এমন অনন্য পারফরম্যান্সের কারণেই ব্যালন ডি’অর জয়ের ক্ষেত্রে রদ্রি ছিলেন বিশ্লেষকদের কাছে অন্যতম যোগ্য প্রার্থী।
ফুটবল সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ কর্তৃক ১৯৫৬ সালে প্রবর্তিত হয় ব্যালন ডি’অর। তখন থেকেই এই পুরস্কারটি ফুটবল বিশ্বের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার হিসেবে পরিচিতি পায়। প্রথম ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন ইংল্যান্ডের স্ট্যানলি ম্যাথিউস, এবং এরপরের ইতিহাসে প্রতিযোগিতাটি পুরুষদের জন্য ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের এক প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। এই বছর আয়োজনের ৬৮তম আসরে রদ্রি পুরস্কার জেতায় ব্যালন ডি’অরের প্রতিযোগিতায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হলো।
রদ্রি মাদ্রিদে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানে বড় হওয়া এই মিডফিল্ডারের ফুটবল যাত্রা শুরু হয় স্প্যানিশ ক্লাব ভিয়ারিয়ালে। এরপর অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে কিছু সফল মৌসুম কাটিয়ে তিনি ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে রদ্রি তার ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ সময় কাটাচ্ছেন, যেখানে তিনি ধীরে ধীরে দলের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন।
রদ্রির খেলা ও ট্যাকটিক্যাল দক্ষতার জন্যই সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা তাকে মিডফিল্ডের অন্যতম স্তম্ভে পরিণত করেছেন। ২০২৩ মৌসুমে তার পারফরম্যান্স ছিল চমকপ্রদ। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে তার গুরুত্বপূর্ণ গোল ম্যানচেস্টার সিটিকে বহু প্রতীক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এনে দেয়। ব্যালন ডি’অর জয়ে এই অর্জনও বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ব্যালন ডি’অর জয়ী হিসেবে রদ্রি কেবল স্পেনেরই নয়, বরং ম্যানচেস্টার সিটির গৌরবকেও অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এসিএল ইনজুরির কারণে তিনি সাময়িকভাবে মাঠের বাইরে থাকলেও ফুটবলবিশ্ব তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে। ব্যালন ডি’অরের মতো সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করে রদ্রি তার ক্যারিয়ারে একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন, এবং ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে আরও অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় থাকবে ফুটবলপ্রেমীরা।
রদ্রির ব্যালন ডি’অর জয়ের এই অর্জন স্পেন ও ম্যানচেস্টার সিটির জন্য গর্বের। ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত পুরস্কার অর্জন করে তিনি প্রমাণ করেছেন তার অসাধারণ দক্ষতা, অধ্যবসায়, এবং অসাধারণ প্রতিভা। ক্রাচে ভর দিয়ে মঞ্চে ওঠা রদ্রির সেই দৃশ্য ফুটবলপ্রেমীদের মনে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।