ঢাকা, অক্টোবর ২৮ – রাজধানীর লালবাগ থানার নবাবগঞ্জ বাজারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চালানো অভিযানে বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এই অভিযানে যৌথ বাহিনী সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করে। অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য, যা সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য বরাদ্দকৃত, মজুদ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২৭ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টা থেকে দুই ঘণ্টা ধরে এই অভিযান পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে এই অভিযান মূলত স্থানীয় ছাত্রদের তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অভিযানে সরকারি টিসিবির এক হাজার ১৩৪০ কেজি ডাল এবং ৬৫০ বোতল দুই লিটারের তেল উদ্ধার করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
এ অভিযানে যৌথ বাহিনী সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি নয়ন খা ও হাসানুল্যাহকে আটক করে। প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার কথা জানানো হয়েছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কীভাবে এসব পণ্য মজুদ হলো এবং এর সাথে আর কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন লালবাগ থানার ওসি কেসইনু মারমা।
মেজর ইয়াহিয়া অভিযানের বিষয়ে জানান, স্থানীয় ছাত্ররা তথ্য দেয়ার পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে প্রায় ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকার পণ্য জব্দ করা হয়, যা বিপুল পরিমাণ টিসিবির পণ্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে এক হাজার ১৩৪০ কেজি ডাল এবং ৬৫০ বোতল দুই লিটারের ভোজ্যতেল।
লালবাগ থানার ওসি কেসইনু মারমা জানান, অভিযানে জব্দ করা পণ্য সরকারি খাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হবে। কিভাবে এসব টিসিবির পণ্য এখানে মজুদ হলো এবং এর সাথে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ওসি জানান।
এছাড়া তিনি আরও জানান, সরকারি বরাদ্দকৃত এসব টিসিবির পণ্য নির্ধারিত বাজারমূল্যে বিক্রি করার জন্য ছিল, যা কালোবাজারে বিক্রির জন্য এখানে মজুদ করা হয়েছিল। এর ফলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য এই পণ্যগুলির প্রাপ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো।
টিসিবির পণ্য বিভিন্ন সময় বাজারে কম দামে সরবরাহ করা হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ মুনাফার আশায় সেগুলো কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টা করে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেলসহ প্রয়োজনীয় ভোজ্যপণ্যের ক্ষেত্রে এমন কালোবাজারি ঠেকাতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এই অভিযান সম্পর্কে স্থানীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, সরকারি পণ্য কালোবাজারির মাধ্যমে বাজারে সংকট তৈরি করা হচ্ছে এবং এর ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চালানো হলে কালোবাজারি চক্র ভাঙা সহজ হবে বলে স্থানীয়দের মত।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর ইয়াহিয়া জানান, স্থানীয় ছাত্ররা বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে অবগত ছিলেন এবং তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের দেয়া সঠিক তথ্যের কারণেই এত বড় মজুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়।
সামগ্রিকভাবে, এই অভিযান স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি তৈরি করেছে। টিসিবির পণ্যের অবৈধ মজুদকরণ এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কঠোর পদক্ষেপ কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।