দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে প্রবাসী আয়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে এক ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের প্রথম ২৬ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৯৪ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলার। যদিও আগের মাসে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের প্রথম ২৬ দিনে ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা চলতি মাসের তুলনায় সামান্য বেশি। তারপরও ধারাবাহিক প্রবাহটি প্রমাণ করে যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অর্থনৈতিক সঙ্কটেও দেশের জন্য অবদান রেখে চলেছেন।
অক্টোবর মাসের প্রথম ২৬ দিনে রেমিট্যান্সের এ প্রবাহের বেশিরভাগ অংশ এসেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে:
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৪ কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ২০ হাজার ডলার।
এই পরিসংখ্যানগুলি থেকে দেখা যায় যে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলি রেমিট্যান্স প্রবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে, যা রেমিট্যান্স সংগ্রহ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এবং সহজ করে তুলছে।
অক্টোবরের বিভিন্ন সপ্তাহে প্রবাসী আয়ে বৈচিত্র দেখা গেছে। চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৪২ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। পরবর্তী সময়ে:
৬ থেকে ১২ অক্টোবরের মধ্যে এসেছে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার ডলার।
১৩ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত এসেছে ৫৪ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার।
২০ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত এসেছে ৪১ কোটি ৫ লাখ ডলার।
প্রতি সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহের এই পরিবর্তনগুলি প্রবাসীদের আয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চাহিদা ও আর্থিক ব্যবস্থার মেলবন্ধনের ইঙ্গিত দেয়।
রেমিট্যান্স প্রবাহের ক্ষেত্রে কিছু ব্যাংকের ভূমিকা নেই। চলতি মাসে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাবাক)সহ মোট ১১টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এই ব্যাংকগুলির মধ্যে রয়েছে:
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক: বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাবাক)।
বেসরকারি ব্যাংক: কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
বিদেশি ব্যাংক: হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।
এই ব্যাংকগুলির মাধ্যমে রেমিট্যান্স না আসা নানান কারণে হতে পারে, যেমন গ্রাহক সন্তুষ্টির ঘাটতি, রেমিট্যান্স হস্তান্তর প্রক্রিয়ার জটিলতা বা প্রতিযোগিতামূলক কমিশন ব্যবস্থা।
গত আগস্টে রেকর্ড ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সেপ্টেম্বর মাসে এটি আরও বৃদ্ধি পেয়ে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। যদিও অক্টোবর মাসের শেষ ২৬ দিনের হিসেব অনুযায়ী রেমিট্যান্সের পরিমাণ কিছুটা কম, তবে সমগ্র মাসের প্রেক্ষাপটে এটি সামগ্রিক চিত্র পরিবর্তন করতে পারে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের এ ধরনের গতি এবং ধারাবাহিকতা দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়ক। বিশেষ করে মুদ্রা বিনিময় হার, অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলোতে এর প্রভাব অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের মোট আয়ের একটি বিশাল অংশ প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের উপর নির্ভরশীল। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে সমৃদ্ধ করে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকিং খাতে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয়ের ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক ও গতিশীল করা জরুরি। এতে আরও প্রবাসী উৎসাহিত হবেন, যার ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।