দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতি গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের উন্নয়নের জন্য বর্তমানে যে সুযোগটি এসেছে, সেটি যদি আমরা কাজে না লাগাই, তাহলে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে যাবে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বিমানবাহিনী সদর দপ্তরে আজ রবিবার নৌ ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে ড. ইউনূস এই মন্তব্য করেন। এই ঐতিহাসিক পর্বে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে তিনি দেশের বর্তমান অগ্রযাত্রায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ড. ইউনূস বলেন, “এই সুযোগটি যদি আমাদের হাতছাড়া হয়, তবে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে এবং বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে।”
বক্তব্যে ড. ইউনূস আরও বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফলে আজ বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। এই ভাবমূর্তি ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণকে আরো ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি। তিনি বলেন, “আমাদের যেসব অর্জন রয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে এবং এই অর্জনগুলোকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এই অগ্রযাত্রায় আমাদের সবার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।”
জাতির এই ক্রান্তিকালে দেশের নৌ ও বিমান বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “নৌ ও বিমান বাহিনী সবসময়ই দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তারা যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা আবারও মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আগামীতেও জাতি যেন তাদের সহযোগিতা পায়, সেই জন্য নেতৃত্বে যে পেশাদারিত্ব এবং নিষ্ঠা দরকার, তা সঠিকভাবে পালনের জন্য এবারের পরিচালনা পর্ষদকে এগিয়ে আসতে হবে।”
ড. ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে নৌ ও বিমান বাহিনী তাদের দক্ষতার সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতেও জাতির পাশে থাকবে। দেশের সংকটময় সময়ে তাদের ভূমিকা জাতির আস্থা এবং ভালোবাসার প্রতীক হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচনী পর্ষদের সদস্যদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, বাহিনীতে পদোন্নতি দিতে হলে কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, শৃঙ্খলা, সততা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, “প্রকৃত নেতৃত্বের গুণাবলী হলো সব ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে স্থিতিশীল থেকে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং একদল দক্ষ কর্মী তৈরি করা।”
ড. ইউনূস নেতৃত্ব গুণাবলীর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আরও বলেন যে, জাতির সামনে এখন একটি সুযোগ রয়েছে যার মাধ্যমে আমরা উন্নতির পথে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারি। তাই যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের বাছাই করতে হবে যারা ভবিষ্যতে জাতির নেতৃত্বে অবদান রাখতে সক্ষম।
অবশেষে ড. ইউনূস জাতির অগ্রযাত্রায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকার কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “সকল স্তরের নাগরিককে জাতি গঠনে অবদান রাখতে হবে। এই অগ্রযাত্রায় কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।”
ড. ইউনূসের এই বক্তব্যে দেশের জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। দেশের জন্য একটি শক্তিশালী ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে প্রস্তুত বলেই মনে করছেন তিনি।