বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে ভিন্নধারার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। আজ শুক্রবার সকালে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সাধারণ মানুষের মাঝে দলীয় প্রচারণা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ ঘোষণা, ছাত্র রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি। রাকিবুল ইসলাম রাকিব দাবি করেছেন, নির্দলীয় সরকারের প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব অভিযোগ করেন যে আওয়ামী লীগ গঠিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার ভাষ্যমতে, “১৫ জুলাইয়ের পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা দক্ষিণ এশিয়ায় বিরল এক ন্যক্কারজনক ঘটনা।” এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা একটি সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন রাকিব।
তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগের প্রতি ছাত্রদল ও নির্দলীয় সরকারের এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। তবে তিনি আরও বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে এমন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ কেবল ছাত্রলীগকে নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয় বরং সমস্ত ছাত্র সংগঠনের মধ্যেও স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা দরকার।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব আরও জানান, ছাত্রদল এখন থেকে আর শোডাউনের রাজনীতি করবে না। তিনি বলেন, “আমরা চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন ধারার ছাত্র রাজনীতি উপহার দিতে, যেখানে জনপ্রিয় ও সত্যিকারের শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্বে আসবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সারা বাংলাদেশে ছাত্রদলের কোনো ছোট ভুলও ক্ষমা করছি না এবং এর জন্য দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ছাত্রদল সভাপতি আরও বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সত্যিকারের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম তাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব গঠন করতে চান তারা। তার মতে, ছাত্র রাজনীতি আর পুরোনো ধারা অনুসরণ না করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে। রাকিব বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বচ্ছ ধারার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন এক রাজনীতির সূচনা করতে চাই যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং তাদের সমস্যা সমাধানই হবে মূল লক্ষ্য।”
রাকিবুল ইসলাম রাকিব জানান, ছাত্রদলের অভ্যন্তরে যারা দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করে আসছেন, তাদের প্রতি পূর্ণ সম্মান ও মূল্যায়ন দেওয়া হবে। তার মতে, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে যথাযথ মূল্যায়ন না করলে সেটা তাদের রক্তের প্রতি এক ধরনের বেইমানি হবে।”
তিনি দাবি করেন, “১৫ বছরের বেশি সময় ধরে অনেক শিক্ষার্থী তাদের জীবন বাজি রেখে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। আমরা তাদের এই আত্মত্যাগকে সাংগঠনিকভাবে মূল্যায়ন করব এবং ভবিষ্যৎ নেতারূপে বিবেচনা করব।”
ছাত্রদল সভাপতি দাবি করেন, বর্তমানে ছাত্রদলই সবচেয়ে স্বচ্ছ ও মানবিক ছাত্র রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, “আমরা সারা দেশে ছাত্রদলের ভেতর থেকে সকল অপ্রয়োজনীয় রাজনীতিকে দূর করে একটি পরিস্কার এবং শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ছাত্রদল সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।”
ছাত্র রাজনীতির এই সংস্কার ও পরিবর্তনের বার্তা দিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব নতুন এক ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার মতে, ছাত্ররাজনীতির এই নতুন ধারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সত্যিকারের নেতার জন্ম দেবে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।