ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে মর্মান্তিকভাবে মাকে হারাতে হলো শিক্ষার্থী আরোয়া তাবাসসুমকে। মায়ের জন্য এই শেষ মুহূর্তটি এক অকল্পনীয় দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে তার জীবনে। মা শামীম আরা বেগম মেয়েকে ভর্তি পরীক্ষার হলে রেখে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন, যেখানে তার আকস্মিক হৃদরোগে মৃত্যু হয়। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে এবং উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরাও গভীরভাবে শোকাহত হয়েছেন।
কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার দিন ঢাকার বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কেন্দ্রে এসেছিলেন। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতোই মেয়ে আরোয়া তাবাসসুমও সেই প্রত্যাশা নিয়ে হাজির হন, তার পাশে ছিলেন মা শামীম আরা বেগম। পরীক্ষাটি ঢাবির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল কেন্দ্রে আয়োজিত হয়েছিল। শামীম আরা বেগম পরীক্ষা চলাকালে মেয়ের জন্য হলের মাঠের পাশে অপেক্ষা করছিলেন।
মেয়ের পরীক্ষা চলাকালে, হঠাৎ করে শামীম আরা বেগম বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। আশপাশে থাকা কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি ব্যথা অনুভব করে মাটিতে বসে পড়েন এবং আশেপাশের লোকজন বিষয়টি দেখে দ্রুত সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেন। কেউ একজন জরুরি চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, তার মৃত্যু হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কারণেই হয়েছে।
ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, একজন অভিভাবক পরীক্ষা কেন্দ্রে অপেক্ষারত অবস্থায় আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়নি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশকে খবর দেয় এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মরদেহ তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মা হারানোর খবরে পরীক্ষা শেষে আরোয়া তাবাসসুমকে কঠিন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরীক্ষা দিতে আসা আরোয়া হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি, বাইরে অপেক্ষা করছেন যে মা, তাকে আর জীবিত দেখবেন না। যেকোনো শিক্ষার্থীর জীবনে এটি এক ভয়ংকর পরিস্থিতি, এবং এই ঘটনাটি তাকে মানসিকভাবে চরম আঘাত দিয়েছে। আরোয়ার জন্য এই মুহূর্তটি কেবল মর্মান্তিকই নয়, এটি তার ভবিষ্যৎ জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলবে।
এই ঘটনাটি জানতে পেরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরাও চরমভাবে শোকাহত হয়েছেন। এই অবস্থায় যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তারা জানিয়েছেন, এমন একটি ঘটনায় ক্যাম্পাসে এক ধরনের নীরবতা বিরাজ করছিল। একজন অভিভাবক জানান, “আমরা আমাদের সন্তানদের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, হঠাৎ এই ঘটনা আমাদের সবাইকে ভেঙে দিয়েছে। এটি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলেছে।”
এই ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা ও মানসিক চাপে থাকতে গিয়ে অনেক অভিভাবকই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীক্ষা চলাকালে এমন অবস্থায় কেউ যেন কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে না পড়েন, এজন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এমনকি পরীক্ষার দিনগুলোতে একটি জরুরি চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হতে পারে যাতে এরকম পরিস্থিতিতে তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা পাওয়া যায়।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের জন্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে গিয়ে ক্লান্তি এবং স্ট্রেসের প্রভাব পড়ে, যা অনেক সময় শারীরিক অসুস্থতায় রূপ নেয়। তাই, পরীক্ষার দিন অভিভাবকদের বিশ্রাম নেওয়া ও সঠিকভাবে খাবার গ্রহণের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এছাড়াও, শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেয়ের স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় ঢাবিতে পরীক্ষা দিতে এসে মাকে হারানোর এই দুঃখজনক ঘটনা শুধুমাত্র এক পরিবারের ক্ষতি নয়, এটি একটি সামাজিক সচেতনতার বিষয়ও বটে। হৃদরোগের মতো জরুরি পরিস্থিতির জন্য সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রস্তুত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনে যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অনেক চাপ ও উৎকণ্ঠায় থাকেন।
