ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ওষুধসহ দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজার সামনে পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে একটি কাভার্ডভ্যানসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ভারতীয় ওষুধ জব্দ করা হয়, যা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আটককৃত দুই ব্যক্তি হলেন সিলেট জেলার জৈয়ন্তাপুর উপজেলার রামপ্রসাদ গ্রামের আব্দুন নূরের ছেলে বাবুল আহম্মেদ (২৬) এবং একই গ্রামের কনাই মিয়ার ছেলে মো. রুবেল আহম্মেদ (৩২)। তাদের বিরুদ্ধে ভারতে তৈরি নিষিদ্ধ ওষুধ চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই দুইজনের জড়িত থাকার প্রমাণ হিসেবে পুলিশ তাদের গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ওষুধ উদ্ধার করেছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৭টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশুগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) গাজী রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। টোল প্লাজার সামনে ঢাকাগামী একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করার সময় এসব অবৈধ ওষুধের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই কাভার্ডভ্যান থেকে ৯৬ হাজার পিস ডাইক্লো-এম ট্যাবলেট, ৩৫৫ পিস প্র্যাকটিন সিরাপ, ১ লাখ ৮০ হাজার পিস ডেক্সসন ট্যাবলেট এবং ৩ লাখ ৬৮ হাজার পিস সাইপ্রোহেপটাডিন ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় পুলিশ ধারণা করছে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে এসব ওষুধ আনা হয়েছে। ওষুধের চালানটি যথাযথ কাগজপত্র ও বৈধতা ছাড়া বাংলাদেশে আনা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দুই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। ফলে পুলিশ ধারণা করছে, তারা একটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান চক্রের অংশ, যারা নিয়মিতভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ওষুধ আনে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই ওষুধগুলো বিশেষভাবে ভারতে উৎপাদিত, এবং তা নিয়মিতভাবে চোরাপথে বাংলাদেশে আনা হয়। মূলত বাংলাদেশের বাজারে এসব ওষুধের চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিয়মিত এই চোরাচালান করে। পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ভারতীয় এই অবৈধ ওষুধগুলো মূলত ডাইক্লোফেনাক, প্র্যাকটিন, ডেক্সামেথাসন এবং সাইপ্রোহেপটাডিনের মতো ওষুধ, যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এসব ওষুধ সঠিক ব্যবহারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন, কিন্তু অবৈধভাবে বাজারে আসার কারণে অনেক মানুষ তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গ্রহণ করতে পারে, যা শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষত, অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে কিডনি, লিভার ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
এ ধরনের ঘটনা দেশে অবৈধভাবে আমদানি হওয়া ওষুধের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য আরও তদন্ত চলছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে, এবং আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অভিযান ছিল একটি পূর্ব-পরিকল্পিত অভিযান। আগে থেকেই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তারা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, একটি বড় চোরাচালান কাভার্ডভ্যানে করে আসছে। এরপর তারা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজায় অভিযান চালান এবং কাভার্ডভ্যানটিকে তল্লাশি করেন।
দেশে অবৈধভাবে ওষুধ আমদানি এবং চোরাচালান রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই ধরনের অপরাধ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। বিশেষত সীমান্তবর্তী এলাকায় এই ধরনের চোরাচালানের ঘটনা বেশি ঘটে। ভারত থেকে অবৈধভাবে ওষুধ এনে বাংলাদেশে বিক্রি করা একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে, এবং এই চক্রের সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
চোরাচালান রোধে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে সমন্বিত অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক এবং দক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত, যাতে সীমান্তে চোরাচালানের ঘটনা কমে আসে। এছাড়া, জনগণের মধ্যেও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে তারা অবৈধ ওষুধ কিনতে উৎসাহিত না হন।
ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা অবৈধ ওষুধ নিয়ে বাংলাদেশে এক বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। এ ধরনের ওষুধের ব্যবহার ও বিপণন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় পদক্ষেপ এবং জনগণের সচেতনতার মাধ্যমে এই চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব।