হবিগঞ্জের মাধবপুরে মাদকাসক্ত যুবকের আত্মহত্যা: পুলিশের চেষ্টার পরও বাঁচানো গেল না
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হল স্থানীয় জনতা। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে মাধবপুর পৌরশহরের মালাকারপাড়ায় সাত্তার মিয়া নামে এক যুবক প্রকাশ্যে নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। পুলিশের আপ্রাণ চেষ্টা এবং স্থানীয়দের সহায়তা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু ঘটে।
নিহত যুবকের নাম সাত্তার মিয়া (৩২)। তিনি মাধবপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়ার আলীর ছেলে। সাত্তার দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন এবং মাদক সেবনের টাকা না পেলে পরিবারে সহিংস আচরণ করতেন। পরিবারের ওপর অত্যাচার চালানোর কারণে তার স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম তার দুই সন্তানসহ বাবার বাড়ি চলে যান। এই ঘটনার পর থেকেই সাত্তারের মানসিক অবস্থা আরও অবনতি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন সাত্তার ধারালো টিন দিয়ে নিজের গলা কাটতে শুরু করেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করলেও সাত্তার তাদের কোনো কথা শোনেননি। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাধবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুর রহমান বলেন, “যুবককে বাঁচানোর জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সে আমাদের কথা শুনছিল না। স্থানীয়দেরও পরিস্থিতি থেকে সরানো কঠিন ছিল।” পুলিশের মতে, সাত্তার মাদকাসক্ত এবং মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন, যা তার আত্মহত্যার মূল কারণ হতে পারে।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল হক জানান, “আমরা সাত্তারের আত্মহত্যার খবর শুনেছি। মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আরও উন্নয়ন প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যায়।
মাদকাসক্তি ও মানসিক অসুস্থতা গভীরভাবে আন্তঃসম্পর্কিত সমস্যা। সাত্তারের মতো মানুষরা যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত থাকেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজনীয় হলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই সহজলভ্য নয়। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে তার আচরণ আরও অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং পরিবার ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।
সাত্তারের আত্মহত্যার ঘটনা সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রসার এবং মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে মাদকাসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে।
হবিগঞ্জের মাধবপুরে সাত্তারের আত্মহত্যার ঘটনা মাদকাসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব এবং সরকারী পর্যায়ে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনাটি আমাদের সকলের জন্য এক প্রকার শিক্ষণীয় যে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং মাদকাসক্তি নিরাময় প্রকল্পগুলোতে আরও বিনিয়োগ ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।