ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে সতর্ক সংকেত, বরিশালের অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চলাচল স্থগিত
বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ঘূর্ণিঝড় দানা ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠায় বরিশালের নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে, ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে, বেলা ১১টা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল স্থগিত করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক।
ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়া এবং বঙ্গোপসাগরের উত্তাল পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ উত্তর বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। প্রবল ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। নদীপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে এবং সকল নৌযানকে সতর্কতার সাথে চলাচল করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে হতাশার মধ্যে পড়েছেন। অনেকেই গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করলেও নৌপুলিশ তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করেছে। নৌবন্দরগুলোতে নৌপুলিশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে এবং সবাইকে আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আজ সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বাতাসের গতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেয়া ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে যথাক্রমে ৫৯৫, ৫৫৫, ৪৮৫ এবং ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে এটি।
আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় দানা বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে মধ্যরাতে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে সাগর অত্যন্ত উত্তাল রয়েছে এবং সেখানে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সামগ্রিকভাবে ঝড়ো হাওয়ার প্রভাব থাকবে।
উপকূলীয় এলাকা এবং নদীবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং সকল ধরনের জাহাজ ও নৌযানকে যথাযথভাবে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে এবং এর ফলে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা যেন সতর্কতার সাথে চলাফেরা করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন।