শেখ হাসিনার পদত্যাগ: সত্য নাকি গুজব? রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে স্পষ্টতার অভাব
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্ক চলছে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্যিই পদত্যাগ করেছেন কিনা। এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে এখনও কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যা জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করেছে।
সম্প্রতি পত্রিকা ‘মানবজমিন’-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন স্বীকার করেছেন যে, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর শুনেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনো লিখিত প্রমাণ নেই। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য আরও বেশি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, কারণ সংবিধানের ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির মন্তব্য অনুযায়ী, তিনি এখনও সেই পদত্যাগপত্র পাননি।
“আমি শুনেছি তিনি (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই,” রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য তার পদত্যাগ নিয়ে সন্দেহের মেঘ ঘনীভূত করেছে। তিনি আরও বলেন, “বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।”
শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিতর্ক তখনই আরও ঘনীভূত হয়, যখন ৫ আগস্টের ছাত্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। সংবিধানের ৫৭(ক) ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য। কিন্তু শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ না থাকার কারণে এই বিষয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা প্রথমবার ঘোষণা করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের কাছে দালিলিক প্রমাণের অভাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি সাক্ষাৎকারে জানান, “সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন, তখনও আমি চেষ্টা করেছি জানার জন্য—প্রধানমন্ত্রী সত্যিই পদত্যাগ করেছেন কিনা। তিনি (জেনারেল ওয়াকার) জানান, শুনেছি পদত্যাগ করেছেন।”
এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। ৮ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ জানায় যে, পরিস্থিতির উত্তরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতি নতুন উপদেষ্টাদের শপথ বাক্য পাঠ করাতে পারেন বলে আপিল বিভাগ মতামত প্রদান করেন।
গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন এবং পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারত সরকার তাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট প্রদান করেছে, যা দিয়ে তিনি অন্য দেশে যাতায়াত করতে পারবেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিভ্রান্তি এবং অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। আপিল বিভাগের মতামত অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পথ খুলে গেছে, কিন্তু শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জমা না দেওয়া পর্যন্ত এই রাজনৈতিক অস্থিরতা থামার কোনো লক্ষণ নেই। রাষ্ট্রপতির মন্তব্য এবং সেনাবাহিনীর ভূমিকাও এই পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিতর্ক এবং রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পদত্যাগপত্রের অনুপস্থিতি এবং আদালতের মতামতের পরেও, এই পরিস্থিতির সমাধান আসতে কিছুটা সময় লাগবে। ভবিষ্যতে কী হবে, তা স্পষ্ট নয়, তবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে এগোতে পারে বাংলাদেশ, যা এই অস্থিরতার সমাপ্তি ঘটাতে পারে।
Like this:
Like Loading...