সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আজ থেকে ১৫ দিনব্যাপী ‘ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪’ উদযাপন শুরু করেছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও জনগণের মধ্যে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগ আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে। এ কর্মসূচি চলবে আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ইতিমধ্যে নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে ঢাকা শহরের সড়কে চলাচলরত সব স্তরের মানুষকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুপ্রেরণা জোগানো হবে। এতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের ওপর, যাতে তারা সড়ক ব্যবস্থাপনা এবং ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
ট্রাফিক পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তার ভাষণে তিনি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থা নগরীর সার্বিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা একটি নিরাপদ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ সড়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই।”
ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বক্তারা ট্রাফিক আইন মেনে চলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জনসাধারণের সহায়তা কামনা করেন।
ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষে চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে লিফলেট বিতরণ, ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে সচেতনতামূলক ব্যানার স্থাপন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ট্রাফিক সচেতনতামূলক ভিডিও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্লস গাইড, বিএনসিসি এবং বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া বাস মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার মাধ্যমে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক সেমিনার ও আলোচনা সভারও আয়োজন করা হচ্ছে।
ঢাকা শহরের যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনের সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অযথা হর্ন বাজানো, ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করা এবং অন্যান্য ট্রাফিক আইন অমান্য করা শহরবাসীর দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
ট্রাফিক পক্ষের মাধ্যমে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের পাশাপাশি, ট্রাফিক পুলিশ এবং জনসাধারণের মধ্যে একটি পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার যেমন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তেমনি নাগরিকদেরও ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও এই কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যে নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে ট্রাফিক সিগন্যাল এবং সড়কের যান চলাচল মনিটরিং করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ বিশেষভাবে যানজটপূর্ণ স্থানগুলোতে দায়িত্ব পালন করছে, যাতে দ্রুত যানজট নিরসন করা যায়।
তাছাড়া, ট্রাফিক পক্ষের সময়ে বিভিন্ন স্থানে জরুরি সেবা প্রদান এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ডিএমপি।
ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান জানিয়েছে। তারা সড়কে ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য সব নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করেছে, বিশেষ করে চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের কাছে। শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়, সচেতন নাগরিক হিসেবেও সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপি মনে করে, জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বিশেষ করে, চালকদেরকে ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলা, গতি সীমা রক্ষা করা এবং পথচারীদের জন্য নির্ধারিত ক্রসিং ব্যবহার করার অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও, পথচারীদেরও নিজ দায়িত্বে ট্রাফিক আইন মানতে হবে এবং নির্ধারিত স্থানে রাস্তা পারাপার করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা এবং যানজটমুক্ত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে ‘ট্রাফিক পক্ষ-২০২৪’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই ১৫ দিনব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রচেষ্টা জোরদার হবে। নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
ঢাকা শহরের বাসিন্দারা যদি নিজেদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলে, তবে একটি সুশৃঙ্খল এবং নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।