ঢাকা: নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও এবার শিক্ষার্থীদের হাতে পহেলা জানুয়ারির মধ্যে সব পাঠ্যবই পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এখনও পুরোপুরি বই ছাপার কাজ শুরু করতে পারেনি। মূলত নতুন কারিকুলাম বাতিল করে পুরাতন কারিকুলামে ফিরে যাওয়ায় পাঠ্যবই পরিমার্জনের প্রক্রিয়া এবং মুদ্রণ কাজ পিছিয়ে গেছে।
মুদ্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া এবং বই পরিমার্জনের কাজ শেষ না হওয়ায় বছরের শুরুতে সব বই ছাপানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। রাজধানীর মাতুয়াইলের ছাপাখানাগুলোর নিরবতা এবং মুদ্রণকর্মীদের অভাবই এই অনিশ্চয়তার প্রমাণ বহন করছে।
বছরের শুরুতে বই ছাপার প্রস্তুতিতে বিলম্ব
সাধারণত আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু হয়। তবে এবার মুদ্রণকর্মীদের দাবি, আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক দেরিতে কাজ শুরু হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে নতুন কারিকুলাম বাতিল করে ২০১২ সালের পুরোনো কারিকুলামে ফিরে যাওয়া। সংশোধন ও পরিমার্জন করতে গিয়ে সময় বেশি লাগছে, বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগ পুনরায় চালু হওয়ায় বইয়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যবই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া হলেও প্রকৃত মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু করতে এখনও বেশ কয়েকটি ধাপ বাকি রয়েছে। অন্যদিকে, মাধ্যমিক পর্যায়ের বই ছাপানোর জন্য প্রয়োজনীয় টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।
শর্ত শিথিলের দাবি মুদ্রণ শিল্পের
বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেছেন, “যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া বছরের প্রথম দিনে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো অসম্ভব। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়ে শর্ত শিথিল করা হলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব।”
মুদ্রণ শিল্প সমিতি আরও জানিয়েছে, দ্রুত পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করা না হলে এবং টেন্ডার শর্ত সহজ না করলে নির্ধারিত সময়ে সব বই ছাপানো সম্ভব হবে না।
এনসিটিবির আশা: সহযোগিতায় সম্ভব হবে সমাধান
এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. একেএম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, “প্রিন্টারদের আন্তরিক সহযোগিতা থাকলে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্পন্ন বই পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হবো বলে আশা করছি।”
চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৩৭ কোটি বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। তবে সময়মতো সব বই প্রস্তুত করতে মুদ্রণ শিল্পের সহযোগিতার পাশাপাশি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।