বাংলাদেশের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ সম্প্রতি একটি নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত হয়েছে, যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গভর্নরের মতে, এস আলমের ব্যাংক লুট একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া ছিল, যা ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। গভর্নর আরও বলেন, এমন সুপরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ব্যাংক ডাকাতি করার ইতিহাস বিরল। এর ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে এক গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
এস আলম গ্রুপের এই আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা নতুন নয়; ইতিহাসের পাতায় খুঁজলে এমন লুটপাটের আরো নজির পাওয়া যায়। ১৮২৯ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘটনাও আজকের এস আলমের ব্যাংক লুটের ঘটনার সাথে অদ্ভুতভাবে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
দ্বারকানাথ ঠাকুর, যিনি ১৮২৯ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে সময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রমানাথ ঠাকুরকে ব্যাংকের কোষাধ্যক্ষ বানান এবং ব্যাংকের মুলধন ১৬ লক্ষ টাকা থেকে মাত্র তিন বছরের মধ্যে ১ কোটি টাকা দাঁড়ায়। কিন্তু এই বৃদ্ধির পেছনে ছিল অসাধু লুটপাটের পরিকল্পনা, যার মূলে ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর ও নীলকররা। ব্যাংকটি ১৮৪৬ সালে দেউলিয়া হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশাল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হয়, যার মধ্যে ১৮ লক্ষ টাকা শুধুমাত্র দ্বারকানাথ ঠাকুরের কোম্পানির ঋণ ছিল।
দ্বারকানাথের ঐতিহাসিক লুটের সাথে এস আলমের ব্যাংক লুটের কৌশলগত মিল দেখতে পাওয়া যায়। উভয় ক্ষেত্রেই আর্থিক ব্যবস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে সম্পদ লুট করা হয়েছে। এস আলমের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নিচ্ছে, যা দ্বারকানাথ ঠাকুরের যুগে অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল।
এস আলমের ব্যাংক লুট আজকের বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যে সংকট তৈরি করেছে, তা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে।