বাংলাদেশ সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য এবং কৃষি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সয়াবিন তেল এবং সার সংগ্রহের মাধ্যমে বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং দেড় লাখ মেট্রিক টন (এমটি) সার সংগ্রহের জন্য পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের সাধারণ জনগণ এবং কৃষকদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করা এবং বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।
রোববার (২০ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির (এসিসিজিপি) অষ্টম বৈঠকে এই প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় সচিবালয়ে, যেখানে মোট পাঁচটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
এই বৈঠকে মূলত কৃষি এবং শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলো আলোচিত হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক ও কৃষি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবগুলো প্রধানত সয়াবিন তেল এবং বিভিন্ন ধরনের সার সংগ্রহের জন্য ছিল। সরকার আশা করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি পৃথক প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) প্রায় ৮৭২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১.২ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার সংগ্রহ করবে। এই সার সংগ্রহ করা হবে চীন, মরক্কো এবং সৌদি আরবের তিনটি কোম্পানি থেকে।
কোম্পানি তিনটি হলো চীনের বনিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং লিমিটেড, মরক্কোর ওসিপি এবং সৌদি আরবের মা’আদেন। ডিএপি সার বাংলাদেশের কৃষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে। এই সার সংগ্রহের মাধ্যমে সরকার নিশ্চিত করতে চায় যে, দেশের কৃষকরা পর্যাপ্ত সার পাবেন এবং তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ৩০ হাজার মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার সংগ্রহ করবে। এই সার সংগ্রহ করা হবে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে। এটি চতুর্থ লটে সরবরাহ করা হবে এবং এর মোট ক্রয়মূল্য হবে ১২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৫৯.৩৩ মার্কিন ডলার।
ইউরিয়া সার বাংলাদেশের কৃষিতে অন্যতম প্রধান সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ করে ধানসহ অন্যান্য প্রধান ফসল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। ইউরিয়া সারের যোগান ঠিক রাখতে সরকার নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সার সংগ্রহ করে। এই পদক্ষেপ দেশের কৃষি উৎপাদনকে স্থিতিশীল রাখতে এবং বাজারে সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। স্থানীয় ওপেন টেন্ডার মেথডের (ওটিএম) মাধ্যমে এই তেল সরবরাহ করবে সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড।
এই তেলের মোট ক্রয়মূল্য হবে প্রায় ৮৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫৭.৯০ টাকা। বাংলাদেশের বাজারে সয়াবিন তেলের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, বিশেষ করে সাধারণ জনগণের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে এটি অন্যতম। তাই সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে বাজারে তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং সরবরাহ সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে সারের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার সরবরাহ অপরিহার্য। ডিএপি এবং ইউরিয়া সার কৃষিক্ষেত্রে প্রধানত ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। ডিএপি সারে ফসফরাস এবং নাইট্রোজেন রয়েছে, যা গাছের শিকড় এবং ফুল-ফল গঠনে সহায়তা করে। অন্যদিকে, ইউরিয়া সারে নাইট্রোজেনের উচ্চমাত্রা থাকায় এটি ফসলের দ্রুত বৃদ্ধি এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।
সারের অভাব হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে সমস্যায় পড়বেন, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এই সার সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে কৃষকেরা সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার পান এবং তাদের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত না হয়।
অন্যদিকে, সয়াবিন তেল দেশের জনগণের অন্যতম প্রধান ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেলের বাজারে দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সাধারণ জনগণের উপর চাপ সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য। তাই সরকার টিসিবির মাধ্যমে সয়াবি
তাই সরকার টিসিবির মাধ্যমে সয়াবিন তেল সংগ্রহ করে বাজারে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়।
বাংলাদেশ সরকার মূলত চীন, মরক্কো, সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ থেকে সার সংগ্রহ করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে। সম্প্রতি সার এবং তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহের সমস্যার কারণে বাংলাদেশের সরকারকে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামেও প্রভাব পড়ছে। তাই সরকার তেল ও সার সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আসছে, যাতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং জনগণের উপর চাপ কমানো যায়।
৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং দেড় লাখ মেট্রিক টন সার সংগ্রহের সরকারি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখা, মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।