ঢাকা, ১১ আগস্ট – ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তার সরকার পতনের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (১০ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন, যা রবিবার (১১ আগস্ট) প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি বলেন, “আমি যদি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেন্ট মার্টিন ও বঙ্গোপসাগর ছেড়ে দিতাম, তাহলে ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”
শেখ হাসিনার এই বক্তব্য আসে এমন সময়, যখন ভারত সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের পেছনে বিদেশি শক্তির হাত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বহু বছর ধরে শেখ হাসিনার সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ” তাকে একটি বিমান ঘাঁটির বিনিময়ে ক্ষমতায় মসৃণ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
বার্তায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, “আমি পদত্যাগ করেছি, যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। ছাত্রদের লাশ নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তা করতে দিইনি। আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম যদি আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব আত্মসমর্পণ করতাম এবং আমেরিকাকে বঙ্গোপসাগরের ওপর কর্তৃত্ব করতে দিতাম।”
তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দয়া করে মৌলবাদীদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না।”
দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যদি দেশে থাকতাম, তাহলে আরো প্রাণহানি হতো। আরো সম্পদ ধ্বংস হয়ে যেত। আমি প্রস্থান করার জন্য অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আপনার নেতা হয়েছি, কারণ আপনি আমাকে বেছে নিয়েছেন, আপনি আমার শক্তি ছিলেন।”
কোটা আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের আবারও বলতে চাই, আমি কোনোভাবেই তোমাদের রাজাকার বলিনি। বরং তোমাদের উত্তেজিত করতে আমার কথাগুলো বিকৃত করা হয়েছিল।”
তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে ও তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে আমার হৃদয় কেঁদে উঠছে। মহান আল্লাহর রহমতে আমি শিগগিরই ফিরে আসব। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে, আবারও দাঁড়াবে।”