সংগীত জগতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছানো মাইনুল আহসান নোবেল সাম্প্রতিক সময়ে বারবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। ‘সারেগামাপা’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশ-বিদেশে বিপুল পরিচিতি লাভ করা এই শিল্পী ব্যক্তিগত জীবনের নানা সংকট এবং বিতর্কিত আচরণের জন্য শিরোনামে ছিলেন দীর্ঘদিন। বিশেষ করে তার স্ত্রী মেহরুবা সালসাবিলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং নেশা সংক্রান্ত অভিযোগগুলো নিয়মিতভাবে তাকে আলোচনায় রেখেছে।
সম্প্রতি রিহ্যাব থেকে ফিরে গানে মনোযোগী হয়ে নতুনভাবে শুরু করার চেষ্টা করেছিলেন নোবেল। তার এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছিলেন অনেকেই, বিশেষ করে প্রাক্তন স্ত্রী সালসাবিল। নোবেলের পরিবর্তনে তিনি আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু মাস ঘুরতেই সেই আশার পালে হঠাৎ আঘাত আসে, নোবেলের আবারও নেশায় আসক্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে, আর এই অভিযোগ তোলেন তার প্রাক্তন স্ত্রী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি রহস্যময় স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সালসাবিল নোবেলের বর্তমান অবস্থার ইঙ্গিত দেন। তার স্ট্যাটাসটি নিয়ে জল্পনা তৈরি হয় নেটিজেনদের মধ্যে। তিনি লেখেন, “ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। খুব দ্রুত বিচার না করে একটু সময় দিন, সত্যটা সবার সামনে চলে আসবে। যে যেটাতে অভ্যস্ত, সেটাই করতে থাকবে। ক্যামেরার সামনের নাটকটি ক্ষণস্থায়ী। সত্য বের হয়ে আসা শুধু ক্ষণিকের অপেক্ষা।” এই কথাগুলোকে অনেকেই নোবেলের প্রতি সরাসরি আক্রমণ হিসেবে দেখছেন। এক নেটিজেনের মন্তব্যের জবাবে আরও বিস্তারিত জানিয়ে সালসাবিল লেখেন, “রিহ্যাব থেকে বের হওয়ার পর একটা মানুষের খাবার কেনার টাকা নেই। মাফ না করলেও খাবার কেনার টাকা দিলাম, উবার ভাড়া নেই তাও দিলাম। তিন মাস ভালো হওয়ার নাটক করল, দ্রুত একটা শো আসছে। আবার ড্রাগ শুরু করে দিয়েছে আর সাথে তো ৫-৭টা বান্ধবী আছেই।”
সালসাবিলের এই স্ট্যাটাস এবং মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, নোবেলের রিহ্যাব থেকে ফিরে ভালো থাকার সময়টা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তার পুরনো নেশার অভ্যাস আবারও ফিরে এসেছে, এবং এবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও নতুন বিতর্ক। সালসাবিল স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, তিনি নোবেলকে আর্থিক সহায়তা করেছেন, এমনকি রিহ্যাব থেকে ফেরার পরও তার পাশে ছিলেন। কিন্তু নোবেলের পক্ষ থেকে সেই সাহায্যের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি।
সালসাবিল আরও বলেন, “সে (নোবেল) রিহ্যাবে ছিল অনেকদিন। ফেরার পর ২-৩ মাসের মতো ভালো ছিল। এখন আবার মাদক নেওয়া শুরু করেছে।” তার বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, নোবেল হয়তো ব্যক্তিগত জীবনে এবং ক্যারিয়ারে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও নেশার প্রতি তার পুরনো আসক্তি তাকে আবারও অন্ধকারে টেনে নিচ্ছে।
নোবেলের ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল উজ্জ্বল। ২০১৯ সালে ‘সারেগামাপা’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশসহ ভারতের সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। তার কণ্ঠের জাদু এবং গানের প্রতি তার গভীর আবেগ শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু খ্যাতির শীর্ষে ওঠার পরই তার ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কগুলো সামনে আসতে শুরু করে। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তিনি আলোচনায় আসেন। বিশেষ করে তার নেশাগ্রস্ততা, নানা ধরণের অসামাজিক আচরণ, এবং স্ত্রী সালসাবিলের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে মিডিয়া বেশ কয়েকবার সরব হয়।
২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর নোবেল বিয়ে করেন মেহরুবা সালসাবিলকে। শুরুতে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকলেও খুব দ্রুতই তাদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। সালসাবিল বারবার অভিযোগ করেছেন যে, নোবেলের নেশাগ্রস্ত আচরণ এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তার ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা তৈরি করছে। এই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে তিক্ততার পর্যায়ে পৌঁছে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
নোবেলের নতুন করে নেশায় ডুবে যাওয়ার অভিযোগ ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার এই অবস্থায় হতাশ হয়েছেন এবং তার পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা করছেন। অন্যদিকে, কিছু ভক্ত মনে করছেন যে, নোবেল তার জীবনের নানা সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও পুরনো অভ্যাসের কারণে তিনি বারবার সেসব সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছেন।
তার ব্যক্তিগত জীবনের এসব সংকট নোবেলের ক্যারিয়ারেও প্রভাব ফেলেছে। অনেক শো বাতিল হয়েছে, অনেক প্রজেক্ট আটকে আছে। তার গানের প্রতিভা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, কিন্তু তার আচরণ এবং নেশায় আসক্তির কারণে তিনি বারবার শিরোনামে আসছেন নেতিবাচক কারণে।
নোবেলের জীবনের এই অধ্যায় একদিকে যেমন তার প্রতিভার অপব্যবহার এবং ব্যর্থতা তুলে ধরছে, অন্যদিকে এটি আমাদের সমাজে নেশা এবং ব্যক্তিগত সংকটের প্রভাব সম্পর্কেও একটি বার্তা দিচ্ছে। নেশা থেকে বেরিয়ে আসা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং এতে শুধুমাত্র ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তিই নয়, সঠিক সমর্থন এবং মনস্তাত্ত্বিক সাহায্যেরও প্রয়োজন হয়। নোবেল যদি তার জীবন এবং ক্যারিয়ার পুনর্গঠন করতে চান, তবে তাকে এই বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
তার ভক্তরা এখন শুধুমাত্র অপেক্ষা করছেন, নোবেল আবারও কবে তার সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবেন এবং সঙ্গীত জগতে তার হারানো স্থান ফিরে পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত জীবন ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সামনের সারিতে রাখা জরুরি।