সিলেট, ১৯ অক্টোবর: সিলেটের মেন্দিবাগ এলাকায় এক ছাত্রলীগ নেতা এবং তার সঙ্গীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে। আহতদের মধ্যে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান মাহমুদ এবং তার সঙ্গী মেন্দিবাগের বাসিন্দা মো. মাজহার রয়েছেন। বর্তমানে তারা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসান ও মাজহার মেন্দিবাগ এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময় হঠাৎই কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে আটক করা সম্ভব হয়নি, তবে ঘটনার পেছনের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতদের মধ্যে মো. হাসান মাহমুদের অবস্থা গুরুতর। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। অন্যদিকে মাজহারও গুরুতর আহত হলেও তার অবস্থা তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য একাধিক সার্জারি করা হয়েছে।
হামলার পর থেকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ঘটনাটির তদন্তে মাঠে নেমেছে। এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এ ঘটনার পেছনে পূর্বশত্রুতার বিষয়টি রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মেন্দিবাগের বাসিন্দারা ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ ধরনের হামলার ঘটনার জন্য স্থানীয়রা নিরাপত্তার ঘাটতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার অভাবকেই দায়ী করছেন। তারা দ্রুত এই হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
হামলার খবর পাওয়ার পর সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগ এবং স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান। ছাত্রলীগ নেতারা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, তারা হামলার ন্যায়বিচার চান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমানে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ঘটনার কারণ উদঘাটনে কাজ করছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি, সন্দেহভাজনদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই হামলার পেছনে ব্যক্তিগত বিরোধ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, কিংবা পূর্বের কোনো সংঘর্ষের প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও তারা সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট শহরে অপরাধের মাত্রা বেড়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও ব্যক্তিগত শত্রুতার ঘটনাগুলো ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগেও সিলেটে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে যা শহরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মেন্দিবাগ এলাকায় এর আগেও কয়েকটি ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এলাকা নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের অপরাধ রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এই হামলার ফলে সিলেটের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা একে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। ছাত্র সংগঠনগুলো এই ঘটনাকে ছাত্র রাজনীতির একটি অন্ধকার দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর পেছনের কারণ উদঘাটনে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সিলেটের সাধারণ জনগণ, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়দের মতে, এ ধরনের অপরাধ দমনে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নেওয়া উচিত।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করবে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করবে। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা সব সম্ভাব্য তথ্য সংগ্রহ করছি এবং দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
—