২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হঠাৎ করেই খবর আসে কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে ভারী হয়ে উঠেছিল আকাশ-বাতাস, কেঁদে উঠেছিল দেশের সংগীতপ্রেমীরা। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীরা আজও তাঁকে ভুলতে পারেননি। বরং নানা উপায়ে এখনো বেঁচে আছেন তিনি ভক্তদের হৃদয়ে, অমর হয়ে রয়েছেন তাঁর গানের সুরে।
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে যেসব শিল্পীর অবদান অনস্বীকার্য, তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন আইয়ুব বাচ্চু। আশির দশক থেকে শুরু করে গিটার, সুর ও গানের কথায় মুগ্ধ করেছেন অসংখ্য শ্রোতাকে। চার দশকের ক্যারিয়ারে তিনি শুধুমাত্র গায়ক বা গিটারিস্ট হিসেবেই নয়, বরং ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজের নাম লিখেছেন।
আইয়ুব বাচ্চুর জন্ম চট্টগ্রামে, যেখানে কিশোর বয়স থেকেই পশ্চিমা সংগীতের প্রতি তাঁর আলাদা আগ্রহ ছিল। কলেজজীবনে সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ডদল—‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে এই ব্যান্ডটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। এই দলের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ এবং আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন প্রধান গিটারিস্ট। চট্টগ্রাম থেকেই তাঁর সংগীতযাত্রার শুরু, যা পরবর্তীতে ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আইয়ুব বাচ্চুর সংগীতজীবনে প্রকাশিত হয়েছে ১৬টি একক অ্যালবাম এবং ১২টি ব্যান্ড অ্যালবাম। তাঁর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুখ’, ‘তবুও’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘স্বপ্ন’, ‘আমাদের বিস্ময়’, ‘মনে আছে নাকি নাই’, ‘স্পর্শ’ ও ‘যুদ্ধ’। একক শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘রক্ত গোলাপ’, ‘কষ্ট’, ‘প্রেম তুমি কী’, ‘পথের গান’, ‘জীবনের গল্প’ ইত্যাদি।
শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে তাঁর গাওয়া কিছু কালজয়ী গান—‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘মেয়ে সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘এক আকাশের তারা’। এসব গান আজও শ্রোতাদের কণ্ঠে জীবন্ত হয়ে বাজে।
‘
আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণের ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সংগীতপ্রেমীদের মনে আজও বিরাজমান তাঁর সৃষ্টির জাদু। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, শ্রোতার মঞ্চে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতই তাঁর গানগুলো স্মরণ করা হয়। গিটার বাজানোয় তাঁর দক্ষতা, গানে তাঁর আবেগ এবং সুরের আবেদন আজও সংগীতপ্রেমীদের প্রাণে চিরন্তন।
আইয়ুব বাচ্চু শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন সংগীতের এক অনন্য স্তম্ভ, যাঁর অবদান কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। দেশের ব্যান্ড সংগীতকে বিশ্বমানের করে তুলতে তাঁর যে অবদান, তা চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
—