রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় অবস্থিত ৩০০ ফিট সড়কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমন করতে বৃহস্পতিবার রাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে এই অভিযান চলে গভীর রাত ১টা পর্যন্ত। অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল মাদকাসক্তদের দমন, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা।
এই অভিযান পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনী, ট্রাফিক পুলিশ এবং থানা-পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করে। অভিযানকালে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়, যেখানে প্রতিটি গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং পথচারীকে তল্লাশি করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, এই অভিযান মূলত জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধপ্রবণতা কমাতে পরিচালিত হয়।
অভিযানে মোট ১৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়া সড়ক নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন, মাদক সেবন, সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি এবং ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করার অপরাধে মোট ১২ জনকে আটক করা হয়। এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অভিযানে জরিমানা হিসেবে মোট ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলা ছিল ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা এবং অবৈধভাবে গাড়ি চালানোর জন্য।
অভিযানের সময় মোট ২৭টি মোটরসাইকেল এবং ২টি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। এসব যানবাহনের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ট্রাফিক কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, যানবাহন চালকদের নথিপত্র না থাকা বা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় চলাচল করা যানবাহনগুলোকেই মূলত জব্দ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ৩০০ ফিট সড়ক এলাকায় অপরাধমূলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মাদকাসক্তদের উপস্থিতি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতি এবং সিগন্যাল অমান্য করার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে এই অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিচ্ছিল।
সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। অপরাধ দমন এবং সড়ক নিরাপত্তা বিধানে এই ধরনের যৌথ অভিযান নিয়মিত চালানো হবে।”
অভিযানের পর পুলিশ জানায়, এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে। বিশেষ করে উৎসবকালীন সময় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং অপরাধমূলক কার্যক্রম বেড়ে যায়। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছে।
স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া এই অভিযানের প্রতি ইতিবাচক। অনেকেই জানান যে, এমন অভিযান তাদের এলাকায় অপরাধপ্রবণতা কমাতে সহায়তা করছে এবং তারা ভবিষ্যতে এমন কার্যক্রমের সংখ্যা বৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা সবসময় ৩০০ ফিট সড়ককে অপরাধমুক্ত দেখতে চাই। সেনাবাহিনী এবং পুলিশের এই পদক্ষেপ আমাদের মনে সাহস এনে দিয়েছে।”
আটককৃত ১২ জনকে খিলক্ষেত থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “আমরা আইন অনুযায়ী আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি এবং তারা শীঘ্রই আদালতে হাজির হবে।”
এদিকে, যৌথ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের মধ্যে ট্রাফিক আইন মেনে চলার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চায়। তারা বলেছে, জনগণ যদি আইন মেনে চলেন, তাহলে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করার প্রয়োজন পড়বে না।
যদিও বেশিরভাগ মানুষ এই অভিযানের পক্ষে, কিছু মানুষ এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এমন অভিযানের সময় সাধারণ মানুষও হয়রানির শিকার হতে পারে। তল্লাশি ও যানবাহন জব্দের বিষয়টি অনেকেই কঠোর মনে করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, সবার নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া প্রয়োজনীয় ছিল।
সবমিলিয়ে, রাজধানীর ৩০০ ফিট সড়কে এই যৌথ অভিযান অপরাধ দমন এবং নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে অপরাধপ্রবণতা কমানোর আশা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।