যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ পামকিন ওয়ে-অফ’ প্রতিযোগিতায় এবারও সকলের নজর কাড়লেন উদ্যানবিদ্যার শিক্ষক ট্রাভিস জিনজার। তিনি প্রতিযোগিতায় উপস্থিত হন এক দৈত্যাকার কুমড়া নিয়ে, যার ওজন ১,১২১ কেজি বা ২,৪৭১ পাউন্ড! এই অসাধারণ কুমড়াটি প্রতিযোগিতার ৫১তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়। ট্রাভিসের কুমড়া দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী প্রতিযোগীর কুমড়ার চেয়ে মাত্র দুই কেজি ৭০০ গ্রাম বেশি ওজনের। ক্যালিফোর্নিয়ার হাফ মুন বে’তে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় কুমড়ার ওজনই শুধু নয়, এর উৎপাদনের পদ্ধতিও ছিল অসাধারণ।
এই বিশাল কুমড়া নিয়ে ট্রাভিস তার চতুর্থ শিরোপা অর্জন করলেন। মিনেসোটার বাসিন্দা ট্রাভিস গত বছরও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এক হাজার ২৪৭ কেজি ওজনের কুমড়া নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। এ বছর যদিও শীত ও বৃষ্টির বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কুমড়ার বৃদ্ধি কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তারপরও তিনি আবারও সেরা হয়ে ওঠেন।
কুমড়া উৎপাদনের পেছনে অনেক পরিশ্রম আর যত্নশীল পরিচর্যা থাকে। ট্রাভিস জানান, মাটি প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে কুমড়ার গাছে সুষম খাদ্য দেওয়া পর্যন্ত সব কিছুই নিখুঁতভাবে করতে হয়। এ বছর আবহাওয়ার প্রতিকূলতা তার কাজকে আরো চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছিল। শীতের সময়ের আগমনের সঙ্গে রেকর্ডভাঙা বৃষ্টি কুমড়ার বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। তবে এসব প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি সফল হয়েছেন, যা তার কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক পরিচর্যারই ফসল।
ট্রাভিস ও তার পরিবার কুমড়াটি প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালিয়ে নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোর হাফ মুন বে’তে পৌঁছান। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর তারা আবার দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় কুমড়াটি নিয়ে যান। কুমড়াটির ওজন এতটাই বেশি ছিল যে এটি পরিবহন করাও ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, ট্রাভিসের এই সফল যাত্রা প্রমাণ করে দেয়, পরিশ্রম এবং মনোবল দিয়ে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব।
‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ পামকিন ওয়ে-অফ’ শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি সারা বিশ্বে কুমড়া চাষের সচেতনতা বৃদ্ধির অন্যতম একটি মাধ্যম। পুষ্টিকর সবজি হিসেবে কুমড়ার গুরুত্ব রয়েছে এবং এই ধরনের প্রতিযোগিতাগুলো মানুষের মধ্যে কুমড়া চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, দৈত্যাকার কুমড়াগুলোর প্রদর্শনী চাষিদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে এবং কুমড়ার উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে নতুন গবেষণা ও উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে।
ট্রাভিসের এই সাফল্য শুধু তার নিজের নয়, এটি কুমড়া চাষে উদ্যানবিদ্যা ও কৃষির গুরুত্বেরও একটি চিহ্ন। কুমড়া, যা একটি পুষ্টিকর সবজি হিসেবে পরিচিত, এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এই ধরনের প্রতিযোগিতা ভূমিকা রাখে। ট্রাভিস তার উৎপাদিত কুমড়ার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, সঠিক পদ্ধতি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দৈত্যাকার কুমড়া উৎপাদন সম্ভব এবং এটি এক ধরনের শিল্পও হতে পারে।
ট্রাভিস জিনজার তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, তিনি আরও বড় কুমড়া উৎপাদনের জন্য কাজ করবেন। যদিও এই বছর তিনি আবহাওয়ার কারণে কিছুটা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন, তবুও তার লক্ষ্য আরও উচ্চমানের কুমড়া উৎপাদন। তার ইচ্ছা, তিনি এমন একটি কুমড়া উৎপাদন করবেন যা বিশ্বরেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হবে।
ট্রাভিস জিনজারের এই সাফল্য উদ্যানবিদ্যা এবং কৃষি চাষে আগ্রহীদের জন্য একটি উদাহরণ। তার কঠোর পরিশ্রম, সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন যে, সাফল্যের পেছনে থাকে একাগ্রতা, প্রচেষ্টা এবং ধৈর্য। ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ পামকিন ওয়ে-অফ’ প্রতিযোগিতায় তার এই বিশাল কুমড়া সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তাকে কুমড়া চাষের জগতে একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই ধরনের প্রতিযোগিতা কুমড়া চাষের গুরুত্বকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে এবং পুষ্টিকর সবজির প্রতি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে।