শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ৬ দিন পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি পুনরায় শুরু হয়েছে। এরই ফলস্বরূপ বাজারে সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১৪ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) একদিনেই হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩৮টি ট্রাকে ১,০৭৭ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে, যা পাইকারি ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে মঙ্গলবার ছিল ব্যস্ততম একটি দিন। ভারতের ইন্দোর ও সাউথ জাতের পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য হ্রাস পেতে শুরু করে। পূজার ছুটির আগে প্রতিকেজি ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৯৬ থেকে ৯৭ টাকায়, কিন্তু এখন তা নেমে এসেছে ৮০ থেকে ৮১ টাকায়। সাউথ জাতের পেঁয়াজও কম দামে বিক্রি হচ্ছে—৮২ থেকে ৮৩ টাকা কেজি। ফলে পাইকাররা খুশি, কারণ তারা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পেঁয়াজ কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে পাঠাতে পারছেন।
পাইকার আইয়ুব হোসেন বলেন, “পূজার বন্ধের আগে পেঁয়াজের দাম অনেকটাই বেশি ছিল। তখন ৯৬-৯৭ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনে মোকামে পাঠাতে হয়েছে। কিন্তু আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ার পর দাম কমেছে, এখন ৮০-৮৩ টাকায় বিক্রি করতে পারছি। এতে কেজিপ্রতি প্রায় ১৪ থেকে ১৬ টাকা কমেছে, যা আমাদের ব্যবসায় বেশ উপকারী প্রভাব ফেলেছে।”
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের সঙ্গে ৬ দিন ধরে আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। এ বন্ধের কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয় এবং এর দাম বাড়তে থাকে। তবে ছুটি শেষে আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে এবং স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক মামুনুর রশিদ জানান, “দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূজার ছুটির কারণে আমদানি বন্ধ ছিল, তবে ছুটি শেষ হতেই আমদানি শুরু হওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, এই ধারাবাহিক আমদানির ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।”
হিলি স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দ্রুত খালাসের জন্য বন্দরের কর্তৃপক্ষ সক্রিয় রয়েছে। হিলি স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী এস এম জোবায়ের জানান, “পূজার ছুটি শেষে মঙ্গলবার থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বন্দরে একদিনেই ৩৮টি ট্রাকে ১,০৭৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ দ্রুত করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ার ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল হওয়ার আশা করছি। এছাড়া, আজও আমদানি অব্যাহত রয়েছে, ফলে বাজারে সরবরাহের ঘাটতি থাকবে না।”
বাজারে পেঁয়াজের মূল্য হ্রাসের এই ইতিবাচক পরিবর্তন শুধু পাইকারদের জন্যই নয়, বরং সাধারণ ভোক্তাদের জন্যও স্বস্তির বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে পেঁয়াজ একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য। তাই এর দাম বৃদ্ধি হলে জনগণের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি প্রভাব পড়ে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। তবে আমদানি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকায় অনেকেই আশাবাদী যে, পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাংলাদেশের পেঁয়াজ বাজারের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন করা হলেও, তা প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করা হয়। বিশেষত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়লে দেশের বাজারে দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে আমদানিকারক মামুনুর রশিদ বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে এর জন্য স্থলবন্দরের কার্যক্রম এবং আমদানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে হিলি বন্দরসহ দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে হবে। আমদানি অব্যাহত থাকলে, পেঁয়াজের সরবরাহের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবে এর পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া জরুরি, যাতে বিদেশি আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়।
কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে বিদেশি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, দেশের কৃষকদের জন্য পেঁয়াজ চাষে আরও সহায়তা প্রদান করা এবং চাষাবাদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সরবরাহ করা। এভাবে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বিদেশি পেঁয়াজ আমদানির ওপর চাপ কমবে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও বজায় থাকবে।
হিলি স্থলবন্দরের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানির ফলে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। ছুটি শেষে আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে ভবিষ্যতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের উচিত আমদানি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।