শেরপুর, ১৫ অক্টোবর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত শেরপুরের সবুজ মিয়া এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। শ্রীবরদী সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে তিনি জিপিএ ৪.৩৩ অর্জন করেছেন। আজ ফল প্রকাশের পর সবুজের সাফল্যে আনন্দের পরিবর্তে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে।
সবুজের মা সমেজা বেগম ছেলের ফলাফল দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “ছেলের ভালো রেজাল্ট করেছে, কিন্তু এ রেজাল্ট আমাদের কোনো কাজে আসবে না। যেখানে ছেলেই বেঁচে নেই, আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।” সবুজের এই অকাল মৃত্যু তার পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণপোষণ মূলত সবুজের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বাবা আজাহার আলী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী, আর সবুজই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল।

সবুজ ছিলেন পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। বড় বোনের বিয়ের পরই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন থেকেই সবুজ স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। পাশাপাশি, তিনি শ্রীবরদী সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে, সবুজ সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। গত ৪ আগস্ট শেরপুরের খরমপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আলিফ উল্লাহ আহসান সবুজের সাফল্যে প্রশংসা করে বলেন, “সবুজ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ছয় সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব বহন করে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে এত ভালো ফলাফল অর্জন করা খুবই কঠিন কাজ। আমরা তার এই সাফল্যে গর্বিত, কিন্তু তার পরিবার শোকের মধ্যে ডুবে আছে।” তিনি আরও জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ সবুজের পরিবারের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকবে।
সবুজের মায়ের দাবি, “আমরা চাই দোষীদের ফাঁসি হোক। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।”
সবুজের মৃত্যুর পর তার পরিবার এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তার এই সাফল্য হয়তো কিছুটা আনন্দের খবর বয়ে আনতে পারত, কিন্তু আজকের এই দিনটি শুধুই বেদনা আর শোকের স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে তার পরিবারের জন্য।