আগামী শনিবার (১৯ অক্টোবর) দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আলোচনার টেবিলে এবার যোগ দিচ্ছে ৭টি রাজনৈতিক দল। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই আলোচনার প্রধান উদ্দেশ্য দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করা।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়া দলগুলো হলো: গণফোরাম, এলডিপি, লেবার পার্টি, বারো দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (আন্দালিব রহমান পার্থ), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক মুক্তি কাউন্সিল। তবে এবারও আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জাতীয় পার্টিকে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের গুঞ্জন তৈরি করেছে।
আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, আলোচনার প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গত জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের বিচার। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিনিময় করা হবে এবং সামগ্রিক আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে দ্রুততর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা, আইনি ব্যবস্থাপনার জোরদার করা এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়াও বাজার সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজি ইস্যুতেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের পরিকল্পনা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব রয়েছে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, “কারা দাম বাড়াচ্ছে তা জানানো হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার সচেষ্ট রয়েছে এবং পরিবহনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট খাতের কর্মীরা কাজ করবেন।”
সপ্তাহব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে গণফোরাম, এলডিপি, লেবার পার্টি, বারো দলীয় জোটসহ অন্যান্য দলগুলো ড. ইউনূসের সাথে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। গণফোরাম বরাবরই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। এদিকে, এলডিপি ও লেবার পার্টি দেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক অবস্থা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বারো দলীয় জোট এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (আন্দালিব রহমান পার্থ) দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই দলগুলোর প্রধান দাবি হলো, সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ও কার্যকর রাজনৈতিক পরিসর তৈরি করা।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটও এই আলোচনায় অংশ নেবে। তাদের দাবি হলো, নির্বাচনের পূর্বে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা। গণতান্ত্রিক মুক্তি কাউন্সিল বিশেষভাবে শ্রমিক অধিকার এবং শ্রমিক আন্দোলনের সমর্থনে তাদের দাবি জানাবে।
সংলাপের প্রসঙ্গ আসতেই সাংবাদিকরা মির্জা ফখরুলের মাইনাস টু ফর্মুলা ইস্যু নিয়ে জানতে চান। ড. ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ এই বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, সরকারের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই। আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি, আর তা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এটি নিছক গুজব এবং রাজনৈতিক বিতর্ককে উস্কে দেওয়ার জন্য কিছু মহল থেকে এটি প্রচার করা হচ্ছে।”
সংলাপে গার্মেন্টস খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানানো হয়। ড. ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশের ৯৯ শতাংশ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। তবে শ্রমিকদের মধ্যে কিছু ক্ষোভ থাকলেও তা খুব বেশি গুরুতর নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এবং গার্মেন্টস মালিকদের সাথে আলোচনা করে বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা নিরসনে এই সংলাপের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিনিময় এবং সহযোগিতা গড়ে তোলার মাধ্যমে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এদিকে, জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার, বাজার সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েও সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
ড. ইউনূসের সংলাপের পরবর্তী ধাপগুলোতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোরও অন্তর্ভুক্তি আশা করা হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত করবে। জাতীয় পার্টি এবারের সংলাপে না থাকলেও পরবর্তী ধাপে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দফার সংলাপ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে। বর্তমান সংকটের প্রেক্ষিতে, এই সংলাপ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। সংশ্লিষ্ট দলগুলো তাদের মতামত এবং দাবিগুলো সংলাপে তুলে ধরবে, যা আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।