বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কার্যক্রম নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে কাজ করছে না, যা দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অগ্রহণযোগ্য। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ বক্তব্য দেন।
সারজিস আলম, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কাজ করছেন, মঙ্গলবার সিআরপির বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করেন। তিনি ছাত্র আন্দোলনে আহত ৫৭ জন রোগীর খোঁজখবর নেন, যারা বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছেন সিআরপিতে। তাদের মধ্যে ৬ জনের স্পাইনাল কর্ডে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যা অত্যন্ত গুরুতর।
আহতদের দুর্দশা দেখার পর সারজিস আলম তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়া উচিত ছিল। তার দায়িত্ব শুধু মন্ত্রণালয়েই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং তাকে প্রত্যেকটি হাসপাতাল ঘুরে রোগীদের অবস্থা বুঝে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
আহতদের চিকিৎসা নিয়ে সারজিস আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই থেকে আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও কোনো সরকারী সাহায্য আহতদের কাছে পৌঁছায়নি। তিনি আরও বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অর্থনৈতিক সহায়তা না পাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। একটা মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকা খুব বড় কোনো বিষয় নয়। এই অর্থ দিয়ে আহত প্রতিটি রোগীকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা সম্ভব।”
আহতদের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যদি প্রতি আহত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়, তবে এটা কি সরকারের জন্য অনেক বেশি? কেন আমার আহত ভাইরা বলছে তারা কোনো সহায়তা পায়নি?”
সারজিস আলম সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে আহতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা চাই সরকার প্রতিটি হাসপাতালে পৌঁছে আহতদের সঠিক চিকিৎসা ও সাহায্য প্রদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আহতদের সাহায্যের জন্য গঠিত ফান্ড দ্রুত প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে তাত্ক্ষণিক উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু মন্ত্রণালয়ে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে হবে না, প্রত্যেকটি হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের সরাসরি সাহায্য প্রদান করতে হবে।”
সারজিস আলমের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকায় জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “আমরা চাই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্টরা দেশের চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক। আহতদের সঠিক সময়ে সাহায্য না পাওয়া তাদের জীবন বিপন্ন করতে পারে, যা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা হয়ে দাঁড়াবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, দেশের স্বাস্থ্য সেবায় বর্তমানে অনেক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে আহতদের সাহায্য প্রদানে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা জনগণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তিনি সরকারের কাছে দাবি করেছেন, যত দ্রুত সম্ভব আহতদের সহায়তা পৌঁছে দিয়ে দেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হবে।