চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ বছর মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে হতাশার বিষয় হচ্ছে, ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণকারী কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ২৩টি বেড়েছে, যেখানে ২০২৩ সালে শূন্যপাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪২টি।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একযোগে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী।
এ বছর গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় সামান্য কম। গত বছর এই হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালে যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী, সেখানে এ বছর তা বেড়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জনে পৌঁছেছে।
শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রচেষ্টার পরেও, শূন্যপাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি, যা শিক্ষাব্যবস্থায় উদ্বেগের কারণ। যদিও গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৪২টি, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু সমস্যা রয়েছে যা সমাধানের প্রয়োজন।
অন্যদিকে, পাসের হার কমলেও শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর ১ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন, যা ২০২৩ সালে ছিল ৯৫৩টি। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৩৫টি বেড়েছে, যা একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বোর্ডভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায়, সিলেট বোর্ডে সর্বোচ্চ পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরপর বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ঢাকায় ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, যশোরে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ পাসের হার রেকর্ড হয়েছে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এ বছর শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংস বিক্ষোভের কারণে পরীক্ষা মাঝপথে স্থগিত করতে বাধ্য হয় সরকার। পরবর্তীতে ১১ সেপ্টেম্বর স্থগিত পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হলেও, ২০ আগস্ট সরকার শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করে। এর পরিবর্তে স্থগিত হওয়া ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাসের হার কিছুটা কম হলেও, শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে হলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আরো পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। বিশেষ করে শূন্যপাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারির মধ্যে এনে সেগুলোর শিক্ষার মান উন্নত করার তাগিদ দিচ্ছেন তারা। তবে, শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষাব্যবস্থায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে খুশি হলেও, শূন্যপাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।