ঢাকা, ১৪ অক্টোবর: রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে ডাকাতির ঘটনায় আটক করা হয়েছে র্যাব সদস্যসহ আটজনকে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন র্যাব-৪-এর সদস্য মোস্তফা, আরিফ ও ইমাম। এদের বিভিন্ন বাহিনী থেকে র্যাবে পদায়ন করা হয়েছিল এবং অভিযোগ রয়েছে যে তাঁরা মিরপুরে র্যাব-৪-এর ব্যাটালিয়নের আশপাশের অপরাধীদের সঙ্গে মিলে এই ডাকাতিতে অংশ নিয়েছিলেন।
গত শুক্রবার ভোররাতে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী আবু বক্করের বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় সেনা ও র্যাবের পোশাক পরা একটি দল ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রবেশ করে ডাকাতি করে। ঘটনার পরপরই আবু বক্কর অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে ডিএমপির ডিবির সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ তদন্ত করছে।
ডিবির পাশাপাশি র্যাবও ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং শনি ও রবিবার দুই দিনে আটজনকে গ্রেপ্তার করে। র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস গণমাধ্যমকে জানান, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা র্যাব-৪-এর কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছে, যা আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, বাকি পাঁচজন র্যাবের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ডিবির কাছে হস্তান্তর করা তিনজন হলেন শাহ আলীর আরিফুল ইসলাম তালুকদার, ঝিনাইদহের জাহিদ হাসান, এবং মুন্সিগঞ্জের আব্দুস সালাম। এছাড়া ডিবি আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে আছেন মিরপুর পাইকপাড়ার জাকির হোসেন, শরিফুল ইসলাম তুষার, এবং কাফরুলের মাসুদুর রহমান। মাসুদুর রহমান বিজিবির চাকরিচ্যুত সদস্য, যিনি ২০১০ সালে চাকরিচ্যুত হন।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মাসুদুর রহমানসহ ছয়জনকে গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। শুনানির পর আদালত তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় মোট ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করা হলেও ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, আটক র্যাব সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ অপরাধীদের পূর্বপরিচয় ছিল। মোহাম্মদপুরের এক সোর্সের মাধ্যমে তাঁরা আবু বক্করের বাড়ি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। পরে র্যাব ও সেনাবাহিনীর পোশাক পরে ওই বাড়িতে ডাকাতি করতে আসেন। ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসও জব্দ করেছে ডিবি, যা আগেও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সদস্যরা ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডিবি আরও জানায়, গত আগস্টে সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তারা দ্রুত অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করে। এতে ডাকাতি ও অপহরণের মতো অপরাধের মাধ্যমে অর্থ লুটের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এর আগে তারা আরও তিনটি বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বাড়ির মালিকেরা গেট না খোলায় তারা সফল হতে পারেনি।
গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে এবং অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।’ তদন্তের অগ্রগতির ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আরও তথ্য প্রকাশ করা হতে পারে।
এই ঘটনায় র্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে একটি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদন্তের ফলাফল ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন।