ঢাকা, ১৩ অক্টোবর: দেশের ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত ফ্রাঞ্চাইজি লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এরই মধ্যে ১০টি আসর পার করেছে। তবে প্রতিটি আসরেই পেশাদারিত্বের অভাব এবং বিভিন্ন বিতর্ক লিগটির সঙ্গী হয়েছে। এবার সেই চিত্র পাল্টে বিপিএলকে নতুন রূপে উপস্থাপন করতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আসন্ন একাদশ আসরটি ঘিরে দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার মূল কারিগর হিসেবে কাজ করছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিসিবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, বিপিএলকে একটি মানসম্পন্ন এবং আন্তর্জাতিকভাবে আরও গ্রহণযোগ্য টুর্নামেন্ট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ পরিকল্পনার পেছনে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি পূর্বে অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক ইভেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনার ভূমিকা
বিসিবির ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিপিএলকে শুধু একটি টুর্নামেন্ট হিসেবে নয়, বরং ভালোভাবে উপস্থাপন করতে চাই। বিসিবি অবশ্যই মূল ভূমিকা পালন করবে। তবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অলিম্পিকের মতো ইভেন্টে ডিজাইন এবং পরিকল্পনায় যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টে ব্যবহার না করলে সেটা আমাদের জন্য বড় ক্ষতি হবে।”
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, “আমরা চাই এবারের বিপিএলটা যেন আন্তর্জাতিকভাবে আরও স্বীকৃতি পায় এবং নতুনত্ব নিয়ে আসে। আজ আমরা একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছি এবং আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও কিছু বিশদ ধারণা দিয়েছেন। আমরা আরও দু-একদিনের মধ্যে পুনরায় বৈঠক করব এবং চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাব।”
বিপিএলে নতুনত্বের সংযোজন
আসন্ন একাদশ বিপিএলকে ঘিরে বিসিবির পক্ষ থেকে কী কী নতুনত্ব আনা হবে সে বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। তার মতে, এবারের আসরে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোই হবে মূল লক্ষ্য। বিপিএলের প্রচারণা, টুর্নামেন্টের আয়োজন এবং আন্তর্জাতিক প্লেয়ারদের অংশগ্রহণে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে টুর্নামেন্টের আয়োজনের পেশাদারিত্ব এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিসিবি কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে বিপিএলের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা চাই এবারের আসরটি যেন নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে। বিপিএলের মান উন্নয়নের জন্য আমরা বড় পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত এবং আমাদের টুর্নামেন্টকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।”
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও ভবিষ্যত লক্ষ্য
বিপিএলকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও গ্রহণযোগ্য করতে বিসিবি নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বিপিএলকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং টুর্নামেন্টকে বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট ভক্তদের কাছে পৌঁছে দেওয়া বিসিবির অন্যতম লক্ষ্য।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমরা জানি, বিপিএলকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা চাই, বিপিএলকে যেন অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজি লিগগুলোর মতো স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সেজন্য আমরা দর্শকপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছি এবং আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ারদের আকৃষ্ট করার জন্যও কাজ করছি।”
বিপিএল এর ১০টি আসর পেরিয়ে এলেও এটি নিয়ে বিতর্ক ছিল নিয়মিত। তবে বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনার ভিত্তিতে এবার বিপিএলকে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া দিয়ে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর মাধ্যমে বিপিএলকে ঘরোয়া ক্রিকেটের নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে প্রস্তুত বিসিবি। এখন দেখার বিষয়, বিসিবির এই উদ্যোগ কতটা সফল হয় এবং বিপিএল কতটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।