মুম্বাই, ১৩ অক্টোবর: মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী এবং এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ডে কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গোষ্ঠী জড়িত বলে জানিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। সিদ্দিকির হত্যার ঘটনার পেছনে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা ফেসবুকে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে গ্যাংয়ের এক সদস্য। একই সঙ্গে বলিউড তারকা সালমান খানকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সালমানের বাড়ির নিরাপত্তা এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে।
ফেসবুকে ভাইরাল পোস্টে স্বীকারোক্তি ও হুমকি
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার (১৩ অক্টোবর) ফেসবুকে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের এক সদস্যের পোস্ট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বাবা সিদ্দিকি হত্যায় তাদের সম্পৃক্ততা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই পোস্টে বলা হয়, “সালমান খান, আমরা এই লড়াই চাইনি। কিন্তু আপনার জন্য আমাদের ভাই প্রাণ হারিয়েছে।” পোস্টে সিদ্দিকির মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাকে দাউদ ইব্রাহিম ও অনুজ থাপানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়।
বিষ্ণোই গ্যাংয়ের ওই সদস্য আরও লেখে, “বাবা সিদ্দিকি একসময় দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এখন ভদ্র সেজেছিলেন। যারা দাউদের গ্যাংকে সাহায্য করে, তারা সাবধান! আমরা প্রথমে আক্রমণ করি না, কিন্তু প্রতিশোধ নিতে পিছপা হই না।”
এই পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পরই সালমান খানের বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। এর আগে, সালমানের বাড়ির সামনে গুলি চালানোর ঘটনায়ও বিষ্ণোই গ্যাংয়ের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছিল পুলিশ। সালমানের বাবা সেলিম খানকেও কিছুদিন আগে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
হত্যাকাণ্ডের পেছনের চক্রান্ত
শনিবার দশেরা উৎসবের সময় ৬৬ বছর বয়সী বর্ষীয়ান নেতা বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। মুম্বাই পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত তিনজনের মধ্যে দু’জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন হরিয়ানার গুরমেল সিং এবং উত্তরপ্রদেশের ধরমরাজ কাশ্যপ। তৃতীয় জন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের শিব কুমারকে, যাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল এবং হত্যাকারীরা সিদ্দিকির বাড়ির কাছেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিল। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, খুনের জন্য ভাড়াটে খুনিদের ৫০ হাজার রুপি অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল এবং চুক্তি অনুযায়ী বাকি অর্থ পরে দেওয়ার কথা ছিল। এই তিনজন ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও একজন ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, যিনি পর্দার আড়ালে থেকে পুরো পরিকল্পনা পরিচালনা করেছিলেন। তার সন্ধানেও পুলিশ তৎপর রয়েছে।
বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সক্রিয়তা ও সালমানের ঝুঁকি

কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে কারাগারে থাকলেও তার গ্যাং এখনো সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কিছুদিন আগে সালমান খানের বাড়ির সামনে গুলি চালানোর ঘটনায়ও বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনার পরই সালমানের জীবনের ওপর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, এবং সম্প্রতি ফেসবুক পোস্টে সরাসরি হুমকি পাওয়ার পর তার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
এইসব ঘটনায় বলিউডের অভিনেতা সালমান খান এবং তার পরিবার এখন বড় ধরনের নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রয়েছেন। মুম্বাই পুলিশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা এই মামলায় দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে এবং সালমানের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ নজর রাখবে।
বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা মুম্বাই পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য উঠে আসছে এবং পুলিশের লক্ষ্য অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা।