ঢাকা: দেশের বিভিন্ন থানায় বর্তমানে পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা বিরাজ করছে। থানা থেকে ট্রাফিক বিভাগ পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনবল সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে অনেক স্থানে একজন পুলিশ কর্মকর্তা একাধিক বিভাগ সামলাচ্ছেন। পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সেবাপ্রার্থীদের সংখ্যা হাতেগোনা। অথচ গণ অভ্যুত্থানের আগে এই থানায় প্রতিদিন সেবাপ্রত্যাশীদের ভিড় থাকতো। মিরপুর থানায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে, এবং রুটিন কাজ ছাড়া অতিরিক্ত তৎপরতা দেখা যায়নি।
রাজধানীর অন্তত ত্রিশটি থানা এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, যাত্রাবাড়ি ও ভাটারা থানার কার্যক্রম এখনও নিজ ভবনে শুরু হয়নি। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী ইফতেখার হাসান জানান, সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় গণপিটুনিতে অনেক পুলিশ সদস্য প্রাণ হারানোর পর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে প্রশাসনের তরফ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি গাড়ি ভাড়া করে টহল চালানো হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
নগরবাসীর মতে, শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে থানাগুলোর কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে। ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি টের পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। এক বাসিন্দা বলেন, “পুলিশ পুরোপুরি তৎপর না হওয়া পর্যন্ত নাগরিকদের নিরাপত্তা বোধ হবে না।” অন্যদিকে, কেউ কেউ পুলিশের জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি সবার সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
রাতে রাজধানীর থানাগুলোর পরিস্থিতি আরও সুনসান হয়ে থাকে। সেবাপ্রার্থীদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি থানাগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এক বাসিন্দা জানান, “আগের মতো থানায় সেবাপ্রার্থীদের তেমন মূল্যায়ন করা হতো না, কিন্তু বর্তমানে চিত্র পাল্টেছে।”
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। টহল কার্যক্রম কিছুটা কম হলেও ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিএমপিতে বর্তমানে চারজন যুগ্ম কমিশনার এবং সাতজন উপ-কমিশনার নিয়োজিত রয়েছেন। এর পাশাপাশি, গোয়েন্দা বিভাগে কর্মকর্তাদের সঙ্কট রয়েছে এবং মামলার তদন্ত কার্যক্রমেও ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইমামুল হক সাগর বলেন, “অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে কার্যক্রম চলছে। হেডকোয়ার্টার থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।” তবে, এখনও ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন আলোচিত কর্মকর্তা রয়েছেন।
ইমামুল হক সাগর আরও বলেন, “অপরাধীদের শুধুমাত্র আইনের আওতায় আনা হবে এবং যেসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে, তারাই গ্রেফতার হয়েছেন।”
পুলিশ বাহিনীকে পুরোপুরি কার্যক্রমে ফিরতে হলে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা অপরিহার্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।