বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরু হওয়ার আগেই খেলোয়াড়দের ক্যাটাগরি ও মূল্য তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন এবং বিতর্ক শুরু হয়েছে, বিশেষ করে গ্রেডিং সিস্টেম নিয়ে। জাতীয় দলের ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস তার ফেসবুক পোস্টে প্রকাশ্যে এই গ্রেডিং সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কায়েসের দাবি, বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটে খেলোয়াড়দের গ্রেড কীভাবে নির্ধারণ করা হয় তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ভিত্তি নেই।
ইমরুল কায়েস, যিনি জাতীয় দলে ও ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন, তাকে এবারের বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। তিনি মনে করেন, ক্যাটাগরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের নাম এবং চেহারা ভিত্তি হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। তার মতে, শুধুমাত্র বিখ্যাত বা জনপ্রিয় নামধারী ক্রিকেটাররা ‘এ’ বা ‘বি’ গ্রেডে জায়গা পাচ্ছেন, অথচ পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কায়েস বলেন, “বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগে ক্রিকেটারদের গ্রেডিং দেখে চিন্তা করছি গ্রেডিংটা আসলে কিসের ভিত্তিতে করা হয়। জাতীয় দল, সারা বছরের ঘরোয়া পারফরম্যান্স, বিপিএলের পারফরম্যান্স নাকি শুধু নাম দেখে করা হয়। বছরজুড়ে ক্রিকেটের আশেপাশে না থাকা ক্রিকেটারের জায়গা হলো ‘বি’ গ্রেডে। অথচ গত বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা ‘সি’ গ্রেডে।”
কায়েস আরও জানান, বিপিএলে খারাপ পারফরম্যান্স করার কারণে একবার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল তাকে। তিনি স্মরণ করেন, “২০১৮-১৯ মৌসুমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে আমি ভালো করতে পারিনি। যে কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজের পর আমাকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়।” তিনি বিসিবির এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারেন, তার বিপিএলের পারফরম্যান্সের কারণেই তাকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। কায়েস এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও প্রশ্ন তোলেন, বিপিএলে ভালো পারফর্ম করলে কেন তা পরবর্তীতে বিবেচনা করা হয় না।
তিনি বলেন, “২০১৯-২০ মৌসুমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ১৩ ম্যাচে ৪৪২ রান করেছিলাম। কিন্তু এমন পারফরম্যান্সের পরও আমাকে জাতীয় দলে ডাকা হয়নি। এমনকি জাতীয় দলের কোন ক্যাম্পেও রাখা হয়নি। তবে কি বিপিএলে পারফর্ম না করলেই বাদ? কিন্তু পারফর্ম করলে, সেটাও তো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ক্রিকেটের দুর্দিন কি তবে শেষ হবে না?”
বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটে ১৮৮ জন স্থানীয় ক্রিকেটারকে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি ‘এ’-তে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, কায়েসের মতো অভিজ্ঞ ও পারফর্মিং ক্রিকেটারদের রাখা হয়েছে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে, যেখানে পারিশ্রমিক অনেক কম। এই ক্যাটাগরি সিস্টেম নিয়েই মূলত প্রশ্ন তুলেছেন কায়েস এবং তিনি দাবি করেছেন, এর ভিত্তি স্পষ্ট নয়।
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় দল, ঘরোয়া পারফরম্যান্স, বা বিপিএলের পারফরম্যান্স – এগুলোর কোনোটা কি আদৌ বিবেচনায় নেওয়া হয়? যদি তাই হতো, তাহলে যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে বা বিপিএলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে, তাদের সঠিক মূল্যায়ন হওয়া উচিত।”
ইমরুল কায়েসের এই মন্তব্য দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটে ক্যাটাগরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করা উচিত। শুধুমাত্র নাম বা জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।
ইমরুল কায়েসের এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। অনেক সমর্থক তার বক্তব্যের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। তাদের মতে, জাতীয় দল এবং ঘরোয়া পারফরম্যান্স সবসময়ই গ্রেডিং নির্ধারণের ভিত্তি হওয়া উচিত। অন্যদিকে, বিপিএলের কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা এখনো এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
বিপিএল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্টগুলোর একটি এবং এটি দেশের তরুণ এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের জন্য একটি বড় মঞ্চ। তবে, ক্যাটাগরি সিস্টেম এবং গ্রেডিং নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তা শুধু খেলোয়াড়দের মনোবল নয়, পুরো টুর্নামেন্টের স্বচ্ছতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। কায়েসের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের মতামত বিবেচনা করে ভবিষ্যতে বিপিএলের ড্রাফট প্রক্রিয়ায় উন্নতি আনা যেতে পারে।
বিপিএলের একাদশ আসরের ড্রাফট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আশা করছেন, খেলোয়াড়দের গ্রেডিং এবং পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা বজায় থাকবে এবং সকল খেলোয়াড় তাদের প্রাপ্য সম্মান এবং মূল্যয়ন পাবেন।