আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ৩৪টি বিদেশি এয়ারলাইন্স বিভিন্ন দেশের ৫২টি রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। নভেম্বরে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের সংযোজনের মাধ্যমে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৫টিতে।
ঢাকা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী পরিবহন করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার এশিয়া, এয়ার অ্যাস্ট্রা, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস, এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, সৌদি এয়ারলাইনস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, এবং থাই এয়ারওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল। সম্প্রতি এসব এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স, যা ঢাকার আকাশপথে নতুন একটি সংযোজন হবে।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যেই ঢাকা থেকে অফলাইনে তিনটি সাপ্তাহিক নন-শিডিউল কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া যাত্রীবাহী ফ্লাইটটি আদ্দিস আবাবা ও ঢাকার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ব্যবহার করে সপ্তাহে পাঁচটি যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই সংযোগটি বাংলাদেশের জন্য আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈদেশিক যোগাযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনেও প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ, রপ্তানি ও আমদানির প্রবৃদ্ধি, এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বৃদ্ধি। এছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের আগমনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চাহিদা বাড়াচ্ছে।
শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বর্তমানে বছরে প্রায় ৯০ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এয়ারলাইন্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে টিকিটের দাম কমবে এবং যাত্রী সেবার মান উন্নত হবে। অনেক সময় যাত্রীদের চাপের কারণে বিভিন্ন রুটে সিন্ডিকেট করে টিকিটের দাম বাড়ানো হয়, তবে প্রতিযোগিতা বাড়ার সঙ্গে এই সমস্যা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাড়ার ফলে বাংলাদেশের আকাশপথের বাজার আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে। এই প্রতিযোগিতা এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে সেবার মান উন্নত করবে এবং যাত্রীদের সুবিধা বৃদ্ধি করবে। যেহেতু অনেক এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে তাদের ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করছে, সেহেতু দেশের রাজস্বও বাড়বে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও অনেক এয়ারলাইন্স এই বিমানবন্দর থেকে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে। এই টার্মিনালটি চালু হওয়ার পর বাংলাদেশ আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে।
নজরুল ইসলাম, একজন অভিজ্ঞ এভিয়েশন বিশ্লেষক বলেন, “আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যত বাড়বে, ততই আমাদের জন্য ভালো। এতে করে যাত্রী সেবার মান বাড়বে এবং টিকিটের দামও কমবে। যাত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হলে সেবার মানের আরও উন্নতি হবে।”
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের সংযোজন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ১৪৭টি উড়োজাহাজের একটি বহর পরিচালনা করছে এবং এটি আফ্রিকার বৃহত্তম এয়ারলাইন হিসেবে পরিচিত। এটি যাত্রী বহন, বহরের আকার এবং আয়ের দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এয়ারলাইন। বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করার মাধ্যমে এয়ারলাইন্সটি বাংলাদেশ ও আফ্রিকার মধ্যে বাণিজ্য ও পর্যটনের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত বছর একটি এয়ার সার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ঢাকায় তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশে জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) প্রতিষ্ঠান রিদম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহাগ হোসেন জানান, সব প্রয়োজনীয় অনুমতি এবং প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, এবং নভেম্বর মাসের প্রথম দিকেই যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে।
বাংলাদেশে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে। এয়ারলাইন্সের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে টিকিটের দাম কমানো, যাত্রী সেবার মান উন্নত করা, এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালের চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বিস্তৃত হবে, যা দেশের আন্তর্জাতিক পর্যটন ও বাণিজ্যে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।