রাজশাহীতে ইলিশ মাছের বাজারে এবার নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা করে, ইলিশ মাছের টুকরো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন আর ইলিশ কিনতে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হবে না। মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকায়ও ইলিশের স্বাদ নেওয়া সম্ভব হবে। এই উদ্যোগ রাজশাহীর সাহেববাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে এবং এটি সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ইলিশ মাছের দাম দীর্ঘদিন ধরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীর বাজারে ৬০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,০০০ থেকে ২,২০০ টাকায়, যা অনেকের পক্ষে কেনা সম্ভব ছিল না। ফলে ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন প্রচুর মানুষ। জনসাধারণের এ সমস্যার সমাধানে এবং তাদের চাহিদা মেটাতে রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা ইলিশ মাছ কেটে টুকরো করে বিক্রির ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী জানিয়েছেন, এই উদ্যোগটি বিশেষভাবে তাদের জন্য যারা একসাথে পুরো ইলিশ কিনতে সক্ষম নন। ইলিশ মাছ কেটে টুকরো করে বিক্রি করলে সাধারণ মানুষ তাদের সাধ্য অনুযায়ী মাছ কিনতে পারবেন। ১০০, ২০০, এমনকি ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশও কেনা যাবে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য বেশ সুবিধাজনক।
১০ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সাহেববাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে কাটা ইলিশ বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ৯ অক্টোবর ব্যবসায়ী নেতারা ঘোষণা দেন যে, ক্রেতারা চাইলে এক পিস ইলিশও কিনতে পারবেন। এই ঘোষণার পর বাজারে ক্রেতাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, এবং প্রচুর ক্রেতা সাহেববাজারে ভিড় করতে শুরু করেন।
বাজারের এক বিক্রেতা জানান, ইলিশ মাছ কেটে বিক্রির এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এখন বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,০০০ টাকা কেজি দরে। ২৫০ গ্রাম ওজনের একটি টুকরো বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। ক্রেতারা ১০০ থেকে ২০০ টাকার ইলিশের টুকরোও কিনতে পারছেন। এটি বিশেষভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ।
বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশ মাছের পিস বিক্রির ফলে তারা এবং ক্রেতা উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। তবে ২৫০ গ্রাম ওজনের নিচে মাছ বিক্রি করা তাদের জন্য কিছুটা ক্ষতির কারণ হতে পারে, কারণ মাছের পিসগুলোতে মাথা, লেজসহ নানা অংশ থাকে, যা ওজনের হিসেবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২৫০ গ্রাম ওজনের একটি পিস নিলে ক্রেতারা ইলিশের মাথা ও লেজসহ অন্যান্য অংশও পেয়ে যাচ্ছেন, ফলে একাধিক ধরনের ইলিশের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে কম দামে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ২৫০ গ্রাম ওজনের পিস বেচাকেনা হলে উভয়ের জন্যই এটি সুবিধাজনক হবে।
ইলিশ মাছ কেটে বিক্রির এই নতুন উদ্যোগ ক্রেতাদের মধ্যে আশাবাদের সৃষ্টি করেছে। বাজারে আসা ক্রেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের ফলে তারা ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছেন যা আগের মতো সম্ভব ছিল না। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
একজন ক্রেতা জানিয়েছেন, “ইলিশের স্বাদ নিতে পারা আমাদের জন্য এক ধরনের স্বপ্ন ছিল, যা এতদিন ক্রয়ক্ষমতার বাইরে ছিল। কিন্তু এখন আমরা ছোট ছোট পিস কিনে ইলিশের স্বাদ নিতে পারছি, যা সত্যিই আনন্দের।”
রাজশাহীতে ইলিশ মাছের দাম কমাতে এবং সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীদের এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইলিশের কাটা পিস বিক্রির ফলে একদিকে যেমন ক্রেতারা সুবিধা পাচ্ছেন, অন্যদিকে বাজারেও নতুনভাবে চাহিদা তৈরি হচ্ছে।
তবে এই উদ্যোগের ফলে ইলিশের বাজারে চাহিদা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ইলিশের পিস বিক্রির কারণে আরও বেশি মানুষ ইলিশ কেনার প্রতি আকৃষ্ট হবেন এবং বাজারে ইলিশের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।
ইলিশ মাছের টুকরো বিক্রির উদ্যোগ রাজশাহীর বাজারে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এ ধরনের উদ্যোগ দেশের অন্যান্য শহরেও চালু হলে, ইলিশ মাছ সাধারণ মানুষের জন্য আরও সহজলভ্য হবে। এতে করে ইলিশের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পারবে।
এছাড়াও, এই উদ্যোগটি সফল হলে মাছের অন্যান্য প্রজাতির ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যা দেশের মৎস্য বাজারকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং সাধারণ মানুষকে আরও সাশ্রয়ী দামে মাছ কিনতে সক্ষম করবে।
রাজশাহীতে ইলিশ মাছের টুকরো বিক্রির উদ্যোগ সাধারণ মানুষের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ইলিশ মাছের পিস কেনার সুযোগ মানুষকে ইলিশের স্বাদ গ্রহণের নতুন সুযোগ দিচ্ছে। ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের জন্য এটি একটি জয়-জয় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাজারের এই নতুন উদ্যোগ রাজশাহীসহ সারাদেশে ইলিশ মাছের বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।