ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। হিযবুত তাহরীর নামক উগ্রপন্থী সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যা ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
১৯৫৩ সালে জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠিত হিযবুত তাহরীর একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংগঠন, যার প্রধান লক্ষ্য ইসলামী রাষ্ট্র ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তবে সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা এই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য উগ্রপন্থা ও সহিংসতার পথে হেঁটেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, যেমন বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, তুরস্ক, মিসরসহ আরও অনেক দেশে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয়েছে। এবার ভারতও তাদের তালিকায় যুক্ত হলো।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, হিযবুত তাহরীরের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘জিহাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।’ এটি শুধু ভারতের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, এই সংগঠনটি নিরীহ তরুণদের মগজ ধোলাই করে, তাদেরকে উগ্রপন্থার দিকে ধাবিত করে এবং আইএসএস-এর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিতে উসকানি দেয়। এর পাশাপাশি, হিযবুত তাহরীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য তহবিল সংগ্রহেও লিপ্ত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতার নীতি দীর্ঘদিন ধরেই চালু রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এক্স (পূর্বে টুইটার) প্ল্যাটফর্মে পোস্টের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। তিনি লেখেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সন্ত্রাসবাদের প্রতি শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করে আজ হিযবুত তাহরীরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই ঘোষণার পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। হিযবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে সরকারের এই কঠোর অবস্থান মূলত দেশের জনগণকে সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
হিযবুত তাহরীর শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত একটি সংগঠন হিসেবে পরিচিত। এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য হিযবুত তাহরীরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। রাশিয়া, বাংলাদেশ, মিসর, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশেও সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, হিযবুত তাহরীরের মূল কৌশল হলো সাধারণ মুসলিম তরুণদের লক্ষ্য করে তাদের উগ্রবাদী চিন্তাভাবনায় উদ্বুদ্ধ করা। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং গোপন মিটিংয়ের মাধ্যমে তারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। তরুণদের জিহাদের নামে সন্ত্রাসবাদের দিকে আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।
ভারতে এই সংগঠনের নিষিদ্ধ ঘোষণার ফলে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। এর আগেও ভারতে হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা তরুণদের মগজ ধোলাই করে তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত করার চেষ্টা করছিল।
ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হিযবুত তাহরীরের নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে দেশের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নতুন গতি আসবে। বিশেষ করে, দেশের তরুণ সমাজকে সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হিযবুত তাহরীরের নিষিদ্ধ হওয়ার পর সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনী এই সংগঠনের সদস্যদের শনাক্ত করতে নজরদারি বাড়িয়েছে। একইসঙ্গে, হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো ধরনের তহবিল সংগ্রহ, প্রচারণা বা সংগঠনের কার্যকলাপ বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যদিও ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে অনেক মহল থেকে সমর্থন করা হয়েছে, কিছু মানবাধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, এর ফলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। তবে সরকার দাবি করছে, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবং কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়।
ভারতের হিযবুত তাহরীরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা দেশের নিরাপত্তার জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে সংগঠনের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ ও সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো চলমান।