যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, ৯ অক্টোবর ২০২৪ – হারিকেন মিল্টন একটি ভয়াবহ চতুর্থ ক্যাটাগরির ঝড়ে পরিণত হয়ে দ্রুত ফ্লোরিডার পশ্চিম-মধ্য উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) এর তথ্য অনুযায়ী, এই হারিকেন আজ রাতে বা আগামীকাল ভোরে উপকূল বরাবর আঘাত হানতে পারে। ফ্লোরিডা জুড়ে ইতিমধ্যেই ঝড়ের প্রভাব দৃশ্যমান এবং কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছে।
বিবিসি ও সিএনএন এর প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্লোরিডার ফোর্ট মায়ার্সসহ উপকূলবর্তী শহরগুলোতে আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। যে কোনো সময় ভারি বৃষ্টি শুরু হতে পারে, যদিও বর্তমানে কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। সাগরের ঢেউ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উঁচু, ফলে আশপাশের এলাকায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে, যা জনজীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।
ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দাদের ১১ ঘণ্টার মধ্যে হারিকেনের সরাসরি আঘাত হানার আশঙ্কা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। হিলসবরো কাউন্টির শেরিফ চাদ ক্রোনিস্টার বলেছেন, “আপনি যদি সম্ভাব্য বিপদপূর্ণ এলাকায় থাকেন, তবে এখনই সেখান থেকে সরে যান। সাগরের পানির উচ্চতা ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে, যা উপকূলীয় এলাকায় বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।”
তবে কিছু বাসিন্দা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তাদের বাড়িতেই থাকতে ইচ্ছুক। চ্যাম্পিয়নস গেটের বাসিন্দা লিওনার্ড নুজেন্টের মতো অনেকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত না হয়ে বাড়িতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। লিওনার্ড বলেছেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের বাড়িগুলো হারিকেন প্রতিরোধ করার মতো করে তৈরি হয়েছে।” তিনি আরও জানান যে, ঝড়ের পূর্বাভাসে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও তারা যথেষ্ট সতর্কতা গ্রহণ করেছেন।
ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, হারিকেন মিল্টনের বাতাসের গতি বর্তমানে ১৫৫ মাইল প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছেছে, যা ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার ঝড়ের থেকে মাত্র ২ মাইল কম। ১৫৫ মাইল গতিবেগের ঝড়কে ক্যাটাগরি-৪ এর মধ্যে ফেলা হলেও, এর প্রভাব বিশাল হতে পারে। হারিকেনটি আজ মেক্সিকোর উপসাগরের পূর্বাঞ্চলে তাণ্ডব চালাবে এবং বৃহস্পতিবারের মধ্যে পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে সরে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হারিকেন মিল্টনের প্রভাবে ফ্লোরিডার উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সাগরের ঢেউ, প্রচণ্ড বাতাস এবং ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নিচু এলাকাগুলোতে দ্রুত প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় শহরগুলোতে ঢেউয়ের আঘাতে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এনএইচসি সতর্ক করেছে যে, ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, সামুদ্রিক তীরবর্তী এলাকায় ঢেউয়ের কারণে আরও বিপদ তৈরি হতে পারে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ফ্লোরিডার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অনুরোধ জানাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং সেখানকার বাসিন্দারা একে অপরকে সহায়তা করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা জনগণকে সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
ফ্লোরিডার ইতিহাসে আগেও ভয়াবহ হারিকেন আঘাত হেনেছে, তবে এবারের ঝড়ের গতিবেগ এবং প্রভাব আরও ভয়ানক বলে মনে করা হচ্ছে। আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা।
হারিকেন মিল্টন দ্রুত একটি বিপর্যয়কর ঝড়ে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা ফ্লোরিডার পশ্চিম-মধ্য উপকূলে ব্যাপক আঘাত হানতে পারে। ঝড়ের গতি এবং প্রভাবের বিষয়ে পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, বন্যা এবং বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সতর্ক থাকতে বলছেন এবং নাগরিকদের দ্রুত সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।