বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপ কিছুটা কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনির আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই পদক্ষেপের আওতায়, চিনির শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। এনবিআর জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভোক্তাদের জন্য চিনির দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে চায় সরকার।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর উল্লেখ করেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক ও দেশীয় কারণ দায়ী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন চিনির সরবরাহকে ব্যাহত করেছে, তেমনি বাংলাদেশের মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রভাবও পণ্যমূল্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আমদানি করা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া, চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভও সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষ করে শিশুখাদ্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে, তা অনেক সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শুল্ক কমানোর মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
নতুন শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী, এখন অপরিশোধিত চিনির ওপর শুল্ক প্রতি কেজিতে ১১ টাকা ১৮ পয়সা এবং পরিশোধিত চিনির ওপর শুল্ক প্রতি কেজিতে ১৪ টাকা ২৬ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। এনবিআর আশা করছে, এই শুল্ক কমানোর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে চিনির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং বাজারে চিনি সরবরাহ আরও সাশ্রয়ী হবে।
এনবিআর আরও উল্লেখ করেছে যে, শুল্ক কমানোর ফলে চিনি চোরাচালানের প্রবণতা কমবে, কারণ বৈধ চ্যানেলে চিনি আমদানি করা সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। এর ফলে বাজারে চাহিদা পূরণের জন্য বৈধ আমদানির হার বাড়বে এবং বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে বার্ষিক চিনির চাহিদা প্রায় ২০ থেকে ২২ লাখ টন। তবে দেশে উৎপাদিত চিনি স্থানীয় চাহিদার মাত্র ১.৫ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম হয়। বাকি ৯৮ শতাংশের বেশি পরিশোধিত চিনি আমদানি নির্ভরশীল। দেশের প্রধান বেসরকারি চিনিকলগুলো যেমন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই), সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আব্দুল মোনেম লিমিটেড, এবং দেশবন্ধু সুগার মিলস এই চাহিদার সিংহভাগ আমদানি করে থাকে।
বাংলাদেশে আমদানিকৃত চিনির বড় অংশ আসে ব্রাজিল থেকে। দেশের বিশাল চিনি চাহিদা পূরণের জন্য ব্রাজিলের অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়, যা দেশের বেসরকারি চিনিকলগুলো পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ করে। শুল্ক কমানোর ফলে এই আমদানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চিনির আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমানোর এই উদ্যোগ দেশের বাজারে চিনির দাম সহনীয় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুল্ক হ্রাসের ফলে আমদানি ব্যয় কমবে, যার প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে দ্রুত পড়বে। এছাড়াও, চোরাচালান কমিয়ে বাজারে বৈধ আমদানির হার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারকে আরও স্থিতিশীল রাখার প্রত্যাশা করছে সরকার।